২১ আগস্ট ও বিএনপি’র ঐতিহাসিক বিচারহীনতার চরিত্র
২২ আগস্ট ২০২০ ১৯:১৩
‘জেনারেল জিয়া এমন একজন মানুষ ছিলেন, যিনি এক হাতে হত্যা করে অন্য হাতে আহার করতে পারতেন।‘ প্রখ্যাত সাংবাদিক এন্থনী মাসকারেনহাস তার গ্রন্থে (বাংলাদেশ: এ লিগ্যাসি অব ব্লাড) বর্ণনা করেছেন যে, জেনারেল জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক সামরিক সাথী যিনি তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এরকম একজনকে (এন্থনী) প্রশ্ন করেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া কেমন মানুষ ছিলেন? এই প্রশ্ন শুনে সেই ব্যক্তি অনেকক্ষণ অপলক তাকিয়ে থেকে ঢোক গিলে ফিসফিসিয়ে উপরোক্ত উক্তিটি করেছিলেন। ঠিক একইভাবে জেনারেল জিয়ার সন্তান তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাসহ বিরোধীদলীয় নেতাদেরকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সন্ত্রাসী হামালা চালান। তারা যে হামলার নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন লাইট স্ন্যাক্স ফর শেখ হাসিনা’ (শেখ হাসিনাকে নাশতা করানো)। তাদের পিতা-পুত্রের এই ঐতিহাসিক চরিত্র একই সূত্রে গাঁথা। মানুষ হত্যা, হত্যায় সহযোগিতা করা এবং হত্যার বিচার না করা জেনারেল জিয়া, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য এক ও অভিন্ন।
বাঙালির গভীরতম শোকের মাস আগস্ট যেটিকে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের ভাষায় বলা যায় ‘অভিশপ্ত আগস্ট’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্বের ইতিহাসের ভয়াবহ নিষ্ঠুর ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির জনকের সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, তাদের নবপরিণীতা স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেল বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সহ আরও অনেককে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুনি নরপিশাচ চক্র শুধুমাত্র জাতির জনককে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, খুনি মোশতাক চক্র বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। আর এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইলগ রূপ দান করে এই হত্যাযজ্ঞের মাস্টারমাইন্ড খ্যাত খুনি জিয়াউর রহমান। আর এ কারণেই ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালী জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বয়ে বেড়াতে বাধ্য হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হলেও সে সময় দেশের বাইরে থাকায় পরম করুণাময়ের ইচ্ছায় ও সৌভাগ্যক্রমে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পিতা-মাতা সব হারিয়ে সে সময় তারা দেশেও ফিরতে পারেননি।
পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজপথে লড়াই সংগ্রাম ও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে। আরও পাঁচ বছর পর ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। দেশরত্ন শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। আর তখনই উদ্যোগ নেওয়া হয় জাতির কলঙ্কমোচনের। জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনায় দীর্ঘ ২১ বছর বন্ধ থাকার পর উদ্যোগ নেওয়া হয় খুনিদের বিচারের।
কিন্তু ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বিএনপি-জামাত। সেদিন ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল ১৯৭৫ সালের শক্তি। সেদিন ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল ১৯৭১ সালের হেরে যাওয়া শক্তি। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই দেশে আবার জেগে উঠে ৭১ তথা আওয়ামী বিরোধী শক্তি। তারা আবার জেগে উঠে আওয়ামী নিধন অভিযানে সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বে। এ শোকের মাসেই তারা আরেকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় এই বাংলাদেশে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। যে হামলার মূল টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টই ছিল নৃশংস আরেকটি হত্যাকাণ্ডের দিন। সেদিনের সেই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা-বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাসহ প্রায় ৫০০ লোক আহত হন। তাদের অনেকেই আজও সারা শরীরে স্প্লিন্টারের ক্ষত নিয়েই ২১ আগস্টের হামলার স্মৃতি হয়ে আছেন।
এরপর এ বিচারের ঘটনা নিয়ে হয়ে গেল স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রহসন। আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ নাটকীয় কায়দায় এটিকে তামাশায় ও বিচারকে একটি প্রহসন হিসেবে জাতির সামনে উত্থাপন করা হয়। এই ঘটনার মূল নায়ক স্বয়ং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার ছেলে তারেক রহমান আর প্রহসনের মূল নায়ক হিসবে জাতির সামনে হাজির হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গ্রেনেড হামলার সাথে সাথেই আলামত নষ্ট করার জন্য বেগম জিয়ার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী পানি ছিটিয়ে সকল আলামত নষ্ট করে ফেলে। পুলিশ মানুষকে সহযোগিতার বদলে উল্টো সেই সমাবেশে থাকা মানুষদের উপর টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে। হাসপাতালগুলোতে আহত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভর্তি করতে বাধা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এমন কোন নিষ্ঠুরতা নেই যেটি সেদিন খালেদা জিয়ার প্রশাসন করেনি। প্রহসনের অংশ হিসেবে সেদিন খালেদা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। আমরা অপরাধীকে চিহ্নিত করেছি। মূল আসামি জজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে।“ [জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণ, ১১ জানুয়ারি ২০০৫] এছাড়া ও মহান সংসদে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কথা বলতে চাইলে খালেদা জিয়া তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেন তাকে কে মারতে যাবে, শেখ হাসিনা নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। এটা ছিল বেগম জিয়ার প্রহসনের অন্যতম রূপ।
উক্ত ঘটনার কুশীলব খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানকে আড়াল করতেই তিনি এই প্রহসন করেছেন জাতির সাথে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে মাত্র এক মাস ১০ দিনের মাথায় ওই বছরের ২ অক্টোবর কমিশন সরকারের কাছে ১৬২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়, কমিশনের সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে এই সিদ্ধান্তে পোঁছে যে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল। আরও জানানো হয়, অভিযানটি পরিচালনা করা হয়েছিল ভাড়া করা দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে। এর পরই এই মামলায় আকস্মিকভাবে প্রবেশ করানো হয় জজ মিয়া চরিত্র। এই জজ মিয়ার বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। সে ছিল একজন ফুটপাথের ক্ষুদ্র দরিদ্র ব্যবসায়ী। কিন্তু এই জজ মিয়া ছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাজানো। জোরপূর্বক তাকে দিয়ে জবানবন্দী আদায় করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় তার পরিবারকে ভরণ পোষণ দিয়ে জোরপূর্বক এই মামলায় ফাঁসানো হয়। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের একটি পত্রিকার মাধ্যমে ফাঁস হয়ে গেলে জজ মিয়ার নাটক নতুন মোড় নিতে থাকে। মামলা যায় সিআইডি’র হাতে।
অধিক গুরুত্বের দাবি রাখা এই মামলাটি ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন প্রাণ পায়। নতুন করে তদন্ত শুরু হলে অনেক নতুন তথ্য প্রকাশ পায় এবং মামলাটিও নতুন জীবনের দিকে আগায়। এর পর নানা মোড় ঘুরে ২০০৮ সালে আসামির তালিকা থেকে জজ মিয়াকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। ২০০৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আরও অনেকের নাম আসে। সবকিছু ছাপিয়ে ১১৯তম কার্যদিবসে মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৩০ ও আসামিপক্ষ ৮৯ দিন ব্যয় করেছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলা দুটি পাঁচ বার উচ্চ আদালতে নিয়ে যাওয়ায় এই মামলার রায় দেওয়ার জন্য আদালতের ২৯২ কার্যদিবস ব্যয় করতে হয়েছিল। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৪ বছর এক মাস ২০ দিন।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মূলত ছিল শেখ হাসিনাকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য। এই বিচার নিয়ে বিএনপি’র যে প্রহসন তাও তাদের ঐতিহাসিক চরিত্রের অন্যতম রূপ। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ও ছিলেন একই চরিত্রের অধিকারী। তার সময়ে আইন শৃঙ্খলা ছিল তার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি যা করতেন তাই ছিল আইন। এই উপমহাদেশে যার নৃশংসতার আর কোন তুলনা হয় না। ১৯৭৭ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র দু’মাসের মধ্যে ১১৪৩ জন সৈন্যকে ও কয়েকশ অফিসারকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। এই সকল মৃত্যুদণ্ড তিনি নিজেই লিখতেন, তিনি অনুমোদনে মন্তব্য লিখতেন, ‘যতক্ষণ ওরা না মরে ততক্ষণ পর্যন্ত ওদের গলায় ফাঁসি ঝুলিয়ে রাখো’।
জেনারেল জিয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার জন্য যে সামরিক আদালত গঠন করেছিলেন, সেসব আদালতে বিচারের নামে মূলত নরহত্যা চলত। নিয়ম মোতাবেক জেনারেল কোর্ট মার্শাল মৃত্যুর আদেশ দিতে পারে। কোর্ট মার্শালে কমপক্ষে ৫ জন জজ থাকতে হবে এবং এরমধ্যে একজনকে কমপক্ষে লে: কর্নেল ও অন্যান্যদের ক্যাপ্টেনের নিচে নয় এমন হতে হবে। কিন্তু জেনারেল জিয়া সেই বিধি ও বাতিল করেন। কারণ বিধি পালন করা হলে নরহত্যা করা সম্ভব নয় । এই ভেবে তিনি একটি মার্শাল ল’ অর্ডারের মাধ্যমে বিশেষ আদালত গঠন করে একজন লে: কর্নেল এর সাথে হাবিলদার ও সুবেদারদের দিয়ে একটি বিশেষ আদালত বানান এবং তাদের রায় অনুযায়ী অনেককে হত্যা করেন। এমন একটি মার্শাল ল’ ট্রাইব্যুনাল নং-১৮, ঢাকা, কেস নং-১/১৯৭৭ তাং ০৮/১০/৭৭ ইং। উক্ত ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন লে: কর্নেল কাজী সলিমউদ্দিন মোঃ শাহরিয়ার, সুবেদার মো. আব্দুল হালিম, নায়েক সুবেদার আব্দুল হাকিম, হাবিলদার আনোয়ার হোসেন ও হাবিলদার এম এফ আহমদ।
যে কর্নেল তাহের, মুক্তিযুদ্ধের একজন অসীম সাহসী সেক্টর কমান্ডার, বীরউত্তম, যার একটি পা হারিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধে, যার কারণেই জেনারেল জিয়া বন্দীদশা থেকে মুক্তিলাভ করেন, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সেই কর্নেল তাহেরকেও সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের প্রহসন দেখিয়ে নির্মমভাবে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার না করার জন্য ও ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ “ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ” (দায়মুক্তি) জারি করে। আর ১৯৭৯ সালের জিয়াউর রহমান সংসদের মাধ্যমে এটি অনুমোদন করে। ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জিয়া গংদের লক্ষ্য ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে এদেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করা। আর ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে তারই পুত্র তারেক রহমানদের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে আনা তথা মুক্তিযুদ্ধের শক্তিদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া।
সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ আজ ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রূপে। ২১ আগস্ট যে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে আজ তারই হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশে উপনীত হয়েছে। মানুষের বার্ষিক আয় ২০০০ ডলার ছাড়িয়েছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ বাস্তব রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। ঢাকার পথে মেট্রোরেল আজ বাস্তবতার পথে যেটি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এটি আজ বাংলাদেশের আপামর জনতার বিশ্বাস। আমাদের প্রত্যাশা খুব দ্রুত এই খুনিদের ফাঁসি ও অন্যান্যদের শাস্তির খুব দ্রুত বাস্তবায়ন। আজকের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে উজ্জ্বল, সমুদয় উজ্জ্বল হবে, আইনের প্রয়োগ ও খুনিদের শাস্তির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হবে।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতা