বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে জড়িতদের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি
২৭ আগস্ট ২০২০ ০২:১৯
ঢাকা: পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের জন্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা। শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক ওয়েবিনার থেকে তারা এ দাবি জানান।
বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় ‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা’ শীর্ষক এই ওয়েবিনার। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম বলেন, ইতিহাসবিদদের মতে অমর থাকেন তারাই যারা কিছু লিখে যান। ১৫ আগস্ট আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি, কিন্তু আমার মনে হয় তিনি আছেন, উনি আছেন আমার অনুভূতিতে। এই অনুভূতির কারণ হলো বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য যে লেখাগুলো রেখে গেছেন— অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীন— এসব পড়লেই অনুভব করা যায়। আর এসবের পেছনে অনুপ্রেরণা ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, সবচেয়ে জঘন্যতম যেটা, ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে জিয়াউর রহমান সই করেন, যা পার্লামেন্টে উঠেছিল ৬ এপ্রিল। এই আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্রয় দেন জিয়াউর রহমান। একইভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার মদত দেন খালেদা জিয়া। একভাবে যেমন জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদত দিয়েছেন জিয়া, তেমনি তার স্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনিদের প্রশ্রয় দেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, কারা সেনাবাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছিল, তা কমিশন গঠন করে রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যদি জাতি প্রকৃত অপরাধীদের না চিনতে পারে, তাহলে কোনোদিনই জাতীয় বেঈমানদের মুখোশ উন্মোচন হবে না। একুশে আগস্ট খালেদা জিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেও খুনিদের দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করেছিল। এখন আমার মনে হয়, শেখ হাসিনাকে রক্ষা না করলে বাংলাদেশ রক্ষা হবে না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা হবে না। তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ রক্ষা হবে না।
প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা বিচারের সময় দেখি, স্বাক্ষীরা বলছে— বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছেন আমাকে এইখানে হত্যা করো। মানুষ কিন্তু তার জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি তা করেননি। বঙ্গমাতা খুনিদের বলেছিল, আমাকে এখানেই হত্যা করো, আমি কোথাও যাব না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, একটা দেশকে পরিচালনা করার যে অবকাঠামো দরকার, সেটা হচ্ছে একটা সংবিধান। একটা দেশ যখনই উদীয়মান হচ্ছিল, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে কমিশন গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসটা একটু স্বাভাবিক হলেই এই কমিশন গঠন করা হবে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে এই কমিশনের কর্মপরিধি নিয়ে আলোচনা করার জন্য মিটিংও ডেকেছি। সে ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা এই কমিশন গঠন করব।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আজ জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুকে বলছে বিশ্ববন্ধু। বঙ্গবন্ধুর অমরত্ব এখানেই। তিনি বলেছেন, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এবং তিনি কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এটা প্রমাণ করে বাঙালি জাতির প্রতি তার আনুগত্য ছিল। ভালোবাসা-প্রেম সবকিছু ছিল।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তিনি আইনমন্ত্রীকে অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করতে বলেন, যে কমিশন জিয়াউর রহমানসহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত ছিল, তাদের সবার মরণোত্তর বিচার করবে।
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরুও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনিও অবিলম্বে কমিশন গঠনের জন্য আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
আলোচনায় সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরাজিত পক্ষ তাদের পরাজয়ের বদলা নিতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। জিয়াসহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত ছিল, তাদের সবার মরণোত্তর বিচারের দাবি জানাই। আইনমন্ত্রীর কাছে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করার জন্য অনুরোধ জানাই।
তিনি আরও বলেন, পরাজিত শত্রুদের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ শেখ হাসিনা এখনো নিরাপদ নয়। পরাজিত শত্রুরা তাকে হত্যা করার জন্য তাড়া করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে দেশ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাবে।
আরেক সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ভুয়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুসহ যারা ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন, তাদের বিচার বন্ধ করেছিল। এরকম আইন থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিকভাবে বিচার করা সম্ভব ছিল। কেননা এমন আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা সংসদেরও নেই। তাই আইনের চোখে ওই আইনের কোনো মূল্যই ছিল না। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা ছিল, তাদের বিচারের দাবি জানান আব্দুল মতিন খসরু।
সঞ্চালক শেখ ফজলে নূর তাপস জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ২১ বছর আমরা পিতা-মাতা হত্যার বিচার পাইনি। অন্যায়ের বিচার হবে— এটাই একজন ভুক্তভোগীর দাবি। মানবতার দোহাই দিয়ে অপরাধীদের দেশে না ফেরত পাঠানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে হবে। যেসব নেতাকর্মী দলীয় শীর্ষ নেতাকর্মীদের নাম ব্যবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।
সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, এ দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে উঠবে। ২০৪১ সালের মধ্যেই শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এক্সিকিউটিভ কমিটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, সত্তরের নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তান জনগণের রায় প্রতিষ্ঠিত করেনি। কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠা করে গেছে বাঙালির নেতা কে ছিলেন। সব হুমকিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমরা ব্যর্থ হলে ব্যর্থ শক্তি সংগঠিত হবে এবং আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে ষড়যন্ত্রকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
১৫ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আওয়ামী লীগ আইনজীবী পরিষদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কমিশন গঠনের দাবি বঙ্গবন্ধু হত্যা বিচার দাবি ভার্চুয়াল ওয়েবিনার মাহবুবে আলম শেখ ফজলে নূর তাপস হত্যাকারীদের শনাক্ত