মাওলানা ফারুকী হত্যা: ৬ বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত
২৭ আগস্ট ২০২০ ১১:০৮
ঢাকা: ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট। এদিন রাত আটটার দিকে ১৭৪ পূর্ব রাজাবাজারের দোতলা বাসায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ইসলামিক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির দায়েরের ছয় বছর পার হলেও এখনও প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (সিরিয়াস ক্রাইম) মো. রাজীব ফরহান। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়া তারিখ নির্ধারণ করেন ঢাকার সিএমএম আদালত। কিন্তু ওইদিনও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি এ তদন্ত কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত ৪৬ বারের মত সময় পেয়েছেন তিনি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নতুন করে তারিখ ঠিক করেন।
বর্তমানে মামলাটিতে হাদিসুর রহমান সাগর, আব্দুল গাফ্ফার, মিঠু প্রধান ও খোরশেদ আলম নামে চার আসামি কারাগারে রয়েছে। রাকিব ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রাকিব, তারেকুল ইসলাম মিঠু, আলেক ব্যাপারি, মোজাফ্ফর হোসেন ওরফে সাঈদ জামিনে আছেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রাজীব ফরহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তনাধীন রয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে একটু বিলম্বিত হয়েছিল। এখন মামলার অগ্রগতি ভালো। হাদিসুর রহমান সাগর নামে এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে আরও নতুন নতুন আসামি জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে কেউ দেশে আবার কেউ দেশের বাইরে আছে। সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।’
কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসামিরা তো কিছু দেশের বাইরেও আছে। আসামিদের যত দ্রুত গ্রেফতার করতে পারব, তত দ্রুতই চার্জশিট দিয়ে দেবো। চেষ্টা করছি তদন্ত শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দিয়ে দেওয়া যায়।’
আসামিপক্ষের এক আইনজীবী জাইদুর রহমান জানান, মামলাটি সঠিক সময়ে তদন্ত শেষ না হওয়ায় আসামিদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিটি ধার্য তারিখে তাদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এতে করে তাদের আর্থিক অপচয় ঘটছে। মামলার তদন্তে পুলিশ যদি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না পায় তাহলে তারা মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। তখন আর তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হবে না। আর তারা যদি জড়িত থাকেন তাহলে বিচার শুরু হবে। কিন্তু এতদিন তাদের আদালতে আসতেই হচ্ছে।
মামলার এজাহারে ফয়সাল ফারুকী বলেছেন, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায় সাতটার সময় আমার পিতা শাইখ নূরুল ইসলাম ফারুকী (৫০) বাসায় অবস্থান থাকাকালীন কতিপয় ব্যক্তি বাসার কলিং বেলে চাপ দেয়। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে বাসার দরজা খুললে দুজন লোক বাসায় আসে। তখন তারা আমার বাবার সঙ্গে ড্রয়িং রুমে বসে। আনুমানিক ২০ মিনিট পর আরও ছয় থেকে সাত জন লোক আসে। ড্রয়িং রুমে সব লোক বসতে না পারায় বাবা আমার মামাতো ভাই মো. ফারুক হোসেনকে (১৫) ভিতরের রুম থেকে একটা চেয়ার এনে দিতে বলেন। সে চেয়ার নিয়ে গিয়ে দেখে ওই ব্যক্তিরা আমার বাবার মাথায় পিস্তল ও চাপাতি ধরে রেখেছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা তখন আমার মামাতো ভাইয়ের চোখ ও দু’হাত পেছন থেকে বেঁধে গলায় সজরে আঘাত করে। তার কিছুক্ষণ পর আবার একটি কলিং বেলের শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে আসামিরা আমার মায়ের কক্ষে প্রবেশ করে ওখানে থাকা নানী, কাজের বুয়া ও বাবার ভক্ত আরও দুই মহিলাকে বেঁধে ফেলে। ওই দিন রাত আটটার সময় আমার মা কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তার হাতের বাঁধন খুলে ফেলে। এরপর আমার নানীর বাঁধন খুলে ড্রয়িং রুমে যেয়ে দেখতে পায়, বাবা রক্তাক্ত অবস্থান বাঁধা আছে। মা সঙ্গে সঙ্গে বাবার সব বাঁধন খুলে দিলে তার কাটা গলা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। পরে মায়ের চিৎকার শুনে একে একে সবাই রুম থেকে বের হয়ে এসে বাবার মৃতদেহ দেখতে পায়।
এজাহার থেকে জানা যায়, আসামিরা ঘরে ঢুকে নগদ টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল, ক্যামেরাসহ অন্যান্য দামি জিনিস নিয়ে যায়। তারা সেখানে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা অবস্থান করে ঘরের সব জিনিস তছনছ করে। আসামিরা ঘটনার সময় বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছিল।
উল্লেখ্য, নুরুল ইসলাম ফারুকী চ্যানেল আইয়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কাফেলা’ ও ‘শান্তির পথে’ এবং মাই টিভির লাইভ অনুষ্ঠান ‘সত্যের সন্ধান’ উপস্থাপনা করতেন। এছাড়া তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব ছিলেন।
৬ বছর ইসলামিক অনুষ্ঠান উপস্থাপক টপ নিউজ তদন্ত মাওলানা ফারুকী হত্যা