‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি বর্বর পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিত্রতা নয়’
২৭ আগস্ট ২০২০ ২৩:৩০
ঢাকা: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের মধ্য দিয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই পাকিস্তানিদের হাতে একাত্তরে আমরা গণহত্যার শিকার হয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক হতে পারে না।
বুধবার (২৬ আগস্ট) অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ ডটনেটের আয়োজন ‘বিবার্তা সংলাপ’-এ যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এফ এম শাহীনের উপস্থাপনায় ‘২১ আগস্ট: নজিরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ শীর্ষক আলোচনায় অতিথি হিসেবে আরও যুক্ত ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাংবাদিক, লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট স্বদেশ রায়।
লাইভ আলোচনায় মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আমি বিশ্বাস করি— কোনো বাঙালি ন্যূন্যতম চেতনা ধারণ করলে এবং আত্মসম্মানবোধ থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে মিত্রতা তৈরি করবে না। আমি ব্যক্তিগত ও দলীয় অবস্থান থেকে বলতে চাই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সুতরাং এই আওয়ামী লীগ একাত্তরের পরাজিত শক্তির সঙ্গে কোনো মিত্রতা করবে না। কোনো একটি টেলিফোন কলের মাধ্যমে সম্পর্কের ভিত্তি বিবেচনা করা সমীচীন নয়।
১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ২১ আগস্টের হামলা একই সূত্রে গাঁথা কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। একই কারণে এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটানো হয়েছে।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড শুধু ক্ষমতা পালাবদলের হত্যাকণ্ড নয়, এটা ছিল ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছিল, তাদের ষড়যন্ত্র। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বোভৌমত্ব ধ্বংস করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা এবং আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে শেষ করে দেওয়া।
আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারা কী কী কাজ করেছিলেন? জিয়া ক্ষমতায় এসে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দিলেন। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিলেন জিয়া।
হানিফ বলেন, জিয়া ক্ষমতায় এসে দালাল আইন বাতিল করে দিলেন। এর ফলে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী সাড়ে ১১ হাজার আসামিকে মুক্ত করে দিলেন। তিনি জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে দেশে ফিরিয়ে আনলেন। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি তখন নিষিদ্ধ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিয়ে জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়ে মূলত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের তাঁবেদার রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ আরও বলেন, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর ওই জিয়াউর রহমান তাকে (শেখ হাসিনা) ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি। এমনকি একটি মিলাদেও অংশ নিতে দেননি। তখন আমাদের নেত্রী রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন। নেত্রী ফিরে আসার পর আবার ওই পরাজিত শত্রুরা একত্রিত হয়ে নেত্রীর ওপর একাধিক বার হামলা চালিয়েছে। সবশেষ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় অফিসের সামনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইতিহাসের জঘন্যতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ২১ আগস্টের হামলার সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারস খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান এবং তার মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী জড়িত ছিল— এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমি একজন বিচারপতি হিসেবে অজ্ঞ যে কিভাবে ২১ আগস্টের মামলা থেকে খালেদা জিয়া বাদ গেলেন। আমি মামলার রায় পড়েছি। খালেদা জিয়া ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। বাবর, যাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, তিনি ওই সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী জড়িত, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং দুই জন সংসদ সদস্য জড়িত। সবচেয়ে বড় কথা হলো এনএসআই, ডিজিএফআই ও পুলিশের আইজি জড়িত। তাই এর সঙ্গে খালেদা জিয়াও জড়িত— এটা পরিষ্কার।
তিনি বলেন, আমাদের যে ফৌজদারি আইন রয়েছে সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। ফৌজদারি আইনে বলা আছে, একটি মামলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে আবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা যায়।
সাংবাদিক স্বদেশ রায় বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হামলা ছিল প্রথম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ছিল সেনাবাহিনীর একটি অংশের অংশগ্রহণে। আমি এটাকে হত্যা বলবে না, এটা গণহত্যা।
তিনি বলেন, সাংবাদিক হিসেবে ২১ আগস্টের ঘটনার আমিও প্রত্যক্ষদর্শী। ঘটনার কয়েক মিনিট পরে সচিবালয়ের পাশে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি দেখতে পাই। ওই সময় রাজধানীতে সেনাবহিনীর কোনো গাড়ি থাকার কথা নয়। কারণ তখন কারফিউ ছিল না।
আলোচনায় অংশ নেওয়া তিন অতিথি বলেন, ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের বর্বর হত্যাকাণ্ডের পেছনের ইতিহাস উন্মোচন করতে হবে। কারা সেদিন পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছিল, তা পুনঃতদন্তের মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে।
বিবার্তা সংলাপ মাহবুবউল আলম হানিফ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক স্বদেশ রায়