Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে কমিশন’


২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:১৫

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধবংসের ষড়যন্ত্র করছে নূরুল হুদা কমিশন। এর আগে রকিবউদ্দিন কমিশনও একই কাজ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা সফল হননি, বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত অনলাইন গোলটেবিলের বক্তারা।

বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) সুজন-এর পক্ষ থেকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা আরও বলেন, ‘নূরুল হুদা কমিশন আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনে এজেন্টদের ক্ষমতা, প্রিজাইডিং অফিসারদের ক্ষমতা, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা খর্ব করতে চায়। শুধু তাই কমিশনের হাতে নির্বাচন এবং প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের যে ক্ষমতা রয়েছে সেটাও বাতিল করতে চাইছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আইনগত যে ক্ষমতা রয়েছে সেটাও তারা ভোগ করতে চাচ্ছেন না।’

সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

এছাড়া বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক কেবিনেট সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা ও আবু সাইদ খান প্রমুখ।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রকিবউদ্দিন কমিশন থেকে শুরু করে নূরুল হুদা কমিশনও চাচ্ছেন নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, একে দুর্বল করে দেওয়া। আর সেজন্য কমিশন চাচ্ছে আরপিও সংশেধন করে কমিশনের সব ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দিতে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে আমরা নাগরিক হিসাবে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। সব চেয়ে পরিতাপের বিষয় হল, যে কাজে তাদের নিবিষ্ট থাকা দরকার আরপিওসহ বিদ্যমান নির্বাচনি আইনগুলোর সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ না করে কমিশন যেন অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে আজ একটি আইন প্রণয়ন করা দরকার, যে দিকে কমিশন ভ্রক্ষেপ করছে না। আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া আছে, কিন্তু গত ৪৮ বছরেও কোনো সরকারই তা করেনি।‘

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘কমিশনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে কমিশন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়মুক্তি নিতে চাচ্ছে। কমিশনের দায়দায়িত্ব পালনের যে বাধ্যবাধকতা আছে আইন পরিবর্তন করে সেটি থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে। ভাবটা এমন যেহেতু আমরা কিছু করতে পারছি না, সেহেতু আমাদের দায়দায়িত্ব থাকারও দরকার নেই। একটি প্রতিষ্ঠান তখনই নিজেকে ধ্বংস করতে চায় যখন সে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘কমিশনের ভাবখানা এমন যে, কমিশনে থেকে বসে বসে, বাড়ি গাড়ি ক্ষমতা ভোগ করবে। একটা বিশেষ স্ট্যাটাস ভোগ করবে কিন্তু তার যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা পালন করার বাধ্যবাধকতা থেকে সে সরে আসবে, যাতে কেউ তার সমালোচনা করতে না পারে।‘

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমরা অলোচনা করেছিলাম পৃথিবীতে এর চেয়ে হাস্যকর, এর চেয়ে বিতর্কিত ভুয়া নির্বাচন আর হতে পারে না। কিন্তু নূরুল হুদা কমিশন ২০১৮ সালে নির্বাচন করে দেখিয়ে দিযেছে, যে ২০১১৪ সালের চেয়েও হাস্যকর নির্বাচনও হতে পারে। আমার ধারণা করছি আগামীতে আরও হাস্যকর নির্বাচন তারা করতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছে রাজনৈতিক দল ছাড়া, ২০১৮ সালে নির্বাচন হয়েছে ভোটার ছাড়া। অগামীতে তারা নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন ছাড়া।’

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সরকার চাইলে কমিশন সরকারকে আইন করার ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু স্বপ্রণোদিত হয়ে কমিশনের আইন প্রণয়নের উদ্যোগ সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অবস্থা দেখে মনে হয় যেন ‘টু ডু গুড ওয়াজ নেভার আওয়ার টাস্ক’। এক্ষেত্রে একমাত্র সতর্কতাই পারে এর প্রতিকার এবং প্রতিবিধান করতে। ‘ভিজিলেন্স’ সক্রিয় না থাকলে দেশে এক সময় গণতন্ত্র বলে আর কিছু থাকবে না।

বিগ্রেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কমিশনের মডেল থেকে মিশ্র মডেলের দিকে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। তখন সরকার নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় কমিশন নির্বাচন করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রকল্প কমিশন সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি। এটা হলে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা সরকারের কাছে চলে যাবে। ফলে সরকার নিজের ইচ্ছামত ভোটার তালিকা করার সুযোগ পাবে। এটা আমাদের নির্বাচনের জন্য একটি অশনিসংকেত বলে আমি মনে করি।’

তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনা করেন, তার মধ্যে আছে রেজিস্ট্রেশন পলিসি তৈরি, এক্সপেন্ডিচার মনিটরিং কমিটি গঠন, রাজনৈতিক দলের ব্যয়ের অডিট, নারী প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় পাবলিক ফান্ড থেকে করা ও ইভিএম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।

আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সরকার না চাইলে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এজন্য সরকারের ওপর নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও জনগণের চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এখানে সক্রিয় হতে হবে।‘

ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আইন হচ্ছে একটি রক্ষাকবচ। আইন পরিবর্তনের কাজে কমিশন হাত দিতে পারে না। আইন পরিবর্তন করে নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করা অনেকটা আত্মহত্যার শামিল।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের অকার্যকারিতা সম্পর্কে সবাই জানে, আইন পরিবর্তন করার মাধ্যমে তারা জনগণের কাছে আরও ঘৃণ্য হিসাবে গণ্য হবে। সুশীল সমাজও এখানে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।’

সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, ‘কমিশন নিজের ইচ্ছায় চলে, না অন্যের ইচ্ছায় চলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। মনে হচ্ছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে কমিশন এক ধরনের স্বস্তির জায়গায় চলে যেতে চাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ব্যাপারে বলবো নিবন্ধন প্রক্রিয়া শিথিল করা উচিত যাতে নতুন রাজনৈতিক দল ও শক্তি গড়ে উঠতে পারে।‘

সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। কিভাবে আগামিতে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায় সেদিকে আমাদের মনযোগ দিতে হবে। এসব সংশোধনের প্রস্তাব আসলে তাদের সময় ক্ষেপণের একটি চাল হতে পারে বলে আমার মনে হয়।‘

সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের এখন কমিশন নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা দরকার। কমিশনার নিয়োগের জন্য যে সার্চ কমিটি করা হয় সেই সার্চ কমিটির ব্যাপারে আমাদের অনাস্থা চিঠি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’

সভাপতির বক্তব্যে এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কোনো সরকারই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক এটা চায় না। গণজাগরণ না হলে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এগিয়ে আসবে না।’

টপ নিউজ নির্বাচন সুজন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর