Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মসজিদের জানালা ভেঙে বের হয়ে পচা পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন দগ্ধরা’


৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:১৪

ঢাকা: ‘মসজিদের পাশেই আমাদের বাসা। হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ কানে আসে। শব্দ শুনে দৌড়ে বের হতে যতক্ষণ সময় লেগেছে, ততক্ষণে মসজিদের সামনে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আর মসজিদের সামনের রাস্তায় জমে থাকা পচা পানিতে দগ্ধরা সবাই গড়াগড়ি খাচ্ছে আর পানি পানি বলে চিৎকার করছে। সবার শরীর পুড়ে কালো হয়ে গেছে। কারও পরনে কাপড় নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’— এভাবেই শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে কান্নারত অবস্থায় সারাবাংলাকে মসজিদে মুসল্লিদের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন রুবি নামের একজন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে আটটার দিতে নারায়ণগঞ্জের তল্লারবাগ বাইতুর মামুর মসজিদে এসি বিস্ফোরণে ৩৭ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধদের মধ্যে রুবির স্বামী আব্দুস সাত্তারও (৪৫) রয়েছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রুবি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণ হওয়ার মত একটা শব্দ শোনার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। এর পর পরই বাইরে মানুষের চিৎকার শুনতে পাই। চিৎকার শুনেই দৌড়ে বের হয়ে যা দেখি তা মুখে বলার মতো নয়। কারও পরনেই কোনো কাপড় নেই। সবার শরীর কালো হয়ে আছে। সবাই পানি পানি বলে চিৎকার করছে। রাস্তায় সামান্য কিছু জমে থাকা পচা পানি ছিল। সেখানেই গড়াগড়ি খাচ্ছে আর পানি পানি করে চিৎকার করছে। আমার স্বামীও নামাজ পড়তে গিয়েছিল। এরকম অবস্থা দেখে আমি আমার স্বামীকে খুঁজতে থাকি। কিন্তু তাকে কোথাও পাচ্ছিলাম না। এমন পরিস্থিতে আমি অজ্ঞানের মতো সেখানে পড়ে থাকি বেশ কিছুক্ষণ। পরে জানতে পারি আমার স্বামীকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে এখন (রাত সাড়ে ১১টা) পর্যন্ত তাকে নিজ চোখে একটু দেখতে পারিনি। কেউ আমারে তাকে একটু দেখতে দিচ্ছে না’— বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন রুবি।

মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল ১২ বছরের মাইনুদ্দিন। সেও বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে। তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। হাসপাতালের মেঝেতে বসে সেও পোড়ার যন্ত্রণায় চিৎকার করে যাচ্ছে। মাইনুউদ্দিন বলছিল, প্রতিদিন সে নামাজ পড়ে সেখানে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মাইনুদ্দিন শুধু জানে নামাজরত অবস্থায় মসজিদের ভেতরে ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর তার আর কোনোকিছুই মনে নেই।

এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ‘নারায়ণগঞ্জ টিভি’তে কর্মরত একজন সাংবাদিকও দগ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ফরজ নামাজ শেষে কেউ কেউ সুন্নত পড়তে নিয়ত করেছে, আবার কেউ কেউ বেরিয়ে গেছে। তবে যারা বেরিয়ে গেছেন তারা বেঁচে গেছেন। আমি তখন মাত্র মসজিদে ঢুকি। ঢুকে দেখি নামাজের সালাম ফেরাচ্ছে। এ সময় ভাবলাম ফরজ নামাজটা ধরি। তাই ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর আগে যেটুকু সময় পেয়েছি নিয়ত বেঁধে আমিও নামাজে বসে যাই। এরই মধ্যে ঘটনা ঘটে যায়। সালাম ফেরানোর সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিদ্যুৎ চলে যায়। এর এক থেকে দেড় মিনিটের ব্যবধানে পুরো মসজিদ ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। একটু পরেই সবার চিৎকার। অনেকের গায়ে আগুন। সবাই দৌড়ে বাইরে বের হচ্ছেন। কেউ কেউ জানালার কাচ ভেঙে বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।’ এ ঘটনায় ইমাম-মুয়াজ্জিনও দগ্ধ হয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আহত ৩৭ জনের মধ্যে ৩২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া আছে। আহতদের অধিকাংশের শরীরে ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

৩৭ জন দগ্ধ এসি বিস্ফোরণ জানালা নারায়ণগঞ্জ পচা পানিতে গড়াগড়ি ভেঙে মসজিদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর