‘আত্মঘাতী চুক্তি বাতিল করুন, শিশুপার্কের জঞ্জাল সরান’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:০২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সংলগ্ন উদ্যান থেকে শিশুপার্ক অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নাগরিক উদ্যোগ নামে একটি সংগঠন। মানববন্ধন থেকে অবিলম্বে শিশুপার্ক পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সেটিকে আবারও ছায়াঘেরা সবুজ উদ্যানে পরিণত করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকেরা।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় শিশুপার্কের প্রবেশমুখে এই মানববন্ধন হয়েছে, যাতে রাজনীতিবিদ, ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতেও শিশুপার্কের জায়গায় ছায়াঘেরা সবুজ চত্বর ছিল। প্রতিবছর ডিসেম্বরে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করত ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ’। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে সুবিশাল চত্বরটি ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে। তারা সেখানে শিশুপার্ক তৈরি করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। অভিযোগ আছে, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান ঠেকাতে তৎকালীন বিএনপি সরকার সবুজ চত্বর ধ্বংস করে শিশুপার্ক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি তোলা হয়েছিল, শিশুপার্কের ইজারা যেন আর বাড়ানো না হয়। সবুজ উদ্যানটিকে যেন আবারও ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু আপত্তি উপেক্ষা করে আবারও ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের কাছে তিন একর আয়তনের এই জায়গার ইজারা নবায়ন করেছিল সিটি করপোরেশন। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বিদায় নেওয়ার পর এবং চসিকের বর্তমান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দায়িত্ব নেওয়ার পর শিশুপার্ক উচ্ছেদের দাবিতে আবারও সরব হয়েছেন নাগরিকরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘পুরনো সার্কিট হাউসটি কেবল বাংলাদেশের অনন্য ঐতিহ্য নয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনন্য স্থাপত্য। সবুজ চত্বরটি ছিল সেই ঐতিহ্যের অংশ। দেশে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা শুরুর পর সেই চত্বরে হয়েছিল বিজয় মঞ্চ। ইতিহাস বিকৃতিকে রুখে দিয়ে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে শুরু করেছিলেন। এতে বিএনপি সরকারের গাত্রদাহ শুরু হয়। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত চক্রের ইন্ধনে তৎকালীন মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন শিশুপার্ক বানিয়ে সেটা বন্ধ করে দেন।’
‘এবার চুক্তির মেয়াদ শেষের পর পরিবেশবাদীসহ চট্টগ্রামের আপামর নাগরিক সমাজ দাবি তুলেছিল, বরাদ্দের মেয়াদ আরও নতুনভাবে নবায়ন করা না হয়। শিশুপার্কটি সরিয়ে খোলা ময়দান ফিরিয়ে আনার দাবি করেছিলেন নাগরিকরা। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কারও আবেদনে সাড়া দেননি। নগরবাসীর আবেগ-আবেদনের চেয়ে তাদের কাছে ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। তারা আবারও ইজারার মেয়াদ বাড়িয়েছে। অথচ এই শিশুপার্কের পাশেই আছে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস ও রেডিসন ব্লু হোটেলের মতো দুটো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এই শিশুপার্ক থেকে সেসব স্থাপনা লক্ষ্য করে নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
বক্তারা চসিক প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আপনি ব্যক্তিগতভাবে জানেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মঞ্চের আলোচনা বন্ধ করার জন্য শিশুপার্কের নামে এই জঞ্জাল তৈরি করেছিল বিএনপি। এই জঞ্জাল সরিয়ে ফেলুন। অপ্রয়োজনীয় আত্মঘাতী চুক্তি বাতিল করুন। এটি এখন সময়ের দাবি। চট্টগ্রামবাসী আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে ‘
নাগরিক উদ্যোগের কো-চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছের সভাপতিত্বে এবং সমন্বয়কারী মোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে রাজনীতিক সাইদুর চৌধুরী, শফিউল আজম বাহার, আবুল হাসনাত বেলাল, নাজিম উদ্দিন, হাজী শের আলী সওদাগর, আবদুর রহমান মিয়া, শেখ মামুনুর রশীদ, মোহাম্মদ সেলিম, সমির মহাজন লিটন, হাসান মো. মুরাদ, মোহাম্মদ শাহজাহান, জাইদুল ইসলাম দূর্লভ, হাসান মুরাদ, আলমগীর ফেরদৌস, সাইফুল্লাহ আনসারী, রকিবুল আলম সাজ্জি, সরওয়ার্দী এলিন, রাজিব হাসান রাজন ও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমদ ইমু বক্তব্য রাখেন।