‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় শ্রমবাজার হুমকির মুখে’
৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৪৭
ঢাকা: প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় কারণে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়েছে। এই মন্দা কর্মী প্রেরণকারী অন্যতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ একটি চ্যালেঞ্জ। তারপরেও আমরা আশাবাদী। আমরা জানি রাতের পর দিন আসে। এবং সেই দিনটা খুব শিগগিরই আসবে।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালী বিধির ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দক্ষ শ্রমশক্তি প্রস্তুত রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। যেন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং বাজার খোলার সাথে সাথে তাদের বিদেশে পাঠাতে পারি। এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। যদি কোভিড-১৯ পরবর্তী বাজারের সঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি, তাহলে আমাদের বৈদেশিক আয় প্রবাহ অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমবাজার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নানা ধরনের সংবাদ পরিবেশন হওয়ায় এই সম্পর্কিত বিভ্রান্তি দূর করতে এবং শ্রমবাজারের সবশেষ তথ্য তুলে ধরতে এই বিবৃতি।’
শ্রমবাজারের সবশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রায় প্রতি মাসে ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে গিয়েছেন। ২০১৯ জানুয়ারি হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত ৪ লাখ ৬০ হাজার কর্মী বিদেশ গেছেন। কিন্তু ২০২০ জানুয়ারি হতে আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার কর্মী বিদেশে গেছে। এর কারণ এ বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত কোনো কর্মী বিদেশে যেতে পারেনি। অন্য দিকে করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের অভিবাসন সেক্টর থেকে আমাদের কর্মীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ দেশে ফিরে এসেছে।’
প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, গত ১ এপ্রিল হতে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার ১১১ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের অনেকে কাজের মেয়াদ শেষে বা কাজ না থাকায় দেশে ফেরত এসেছেন। যদিও আশঙ্কা করা হয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনার প্রভাবে প্রধানকর্মী নিয়োগকারী দেশগুলোর শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হবে। এতে অনেক বিদেশি কর্মী বেকার হয়ে পড়বেন। আশার কথা এই যে, এখন পর্যন্ত ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠেনি।’
করোনাকালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘যেসব কর্মী ফেরত এসেছেন বা আসবেন তাদের অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃকর্মসংস্থানের প্রয়োজনী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনা সংকট মোকাবিলা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ১৩ কোটি টাকা জরুরি ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিপদগ্রস্ত কর্মীদের দেশে আনা এবং বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনবাসনের জন্য এবং কর্ম সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের অথবা মৃত কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের নিজ জেলা থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে মাত্র ৪ শতাংশ সরল সুদে ৫ বছর মেয়াদী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হচ্ছে।’
ইমরান আহমদ জানান, বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়াও তাদের সামগ্রিক কল্যাণ ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৪২৫ কোটি টাকার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।