নীল নকশা বাস্তবায়নে তৎপর নির্বাচন কমিশন: বিএনপি
১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:৫২
ঢাকা: সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়ন, নির্বাচনি আইন (পিআরও) সংশোধনী প্রস্তাব এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনি আইন-২০২০ প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ: বিএনপির প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই কমিশনের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তারা কী ধরনের কারসাজিতে যুক্ত— তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাদের অতীত কর্মকাণ্ডে এটি স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়নেই তৎপর রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মহামারি করোনাভাইরাস এই গ্রহের সকল মানুষের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। বাংলাদেশও যা থেকে মুক্ত নয়। দেশে স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা ফিরে আসেনি। বরঞ্চ পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে পড়ছে। এমন পটভূমিকায় এ পর্যায়ে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নতুন যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে অপ্রত্যাশিত। আর তা যদি হয়, দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিংবা জনগণের ভোটাধিকার বা অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে জড়িত, তাহলে সে বিষয়ে ন্যূনতম সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বর্তমান মহামারিকালীন সময় নিঃসন্দেহে অনুপযুক্ত।’
‘অথচ নির্বাচন কমিশন এই সময়টিকে বেছে নিয়েছে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আইন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরপিও এর অনেকগুলো মৌলিক সংশোধনী আনয়নের জন্য। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে অপ্রয়োজনীয়, হঠকারী ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো জনগুরুত্বসম্পন্ন নতুন আইন প্রণয়নে জনমত গ্রহণ, সংশ্লিষ্টজনদের অবারিত মত প্রদানের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং আইনের ভাষা ও শব্দচয়নে সর্তকতা গ্রহণ অতিশয় প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত। অথচ বিদ্যমান সময়ে এর কোনটাই সম্ভব নয় জানা সত্ত্বেও যে আইন পরিবর্তনের বা স্বতন্ত্র আইন প্রণয়নের জন্য কোনো জন দাবি নেই এবং যা এখনই করা আদৌ জরুরি নয় তেমন একটি কাজ হাতে নেওয়ার জন্য কমিশনের উদ্যোগ অসময়োচিত, সামর্থের অপব্যয় ও সন্দেহজনক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রকিবউদ্দিন কমিশন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত নির্বাচনি আইনে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটার দুইটা দিক আছে। একটা হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করা, আরেকটা হচ্ছে কমিশনকে দুর্বল ও অকার্যকর করা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইতোমধ্যে বর্তমান কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, এ সময় যে কাজে তাদের একান্তভাবে নিবিষ্ট থাকা দরকার সেই আরপিওসহ বিদ্যমান নির্বাচনি আইনগুলোর সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ না করে কমিশন অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন বিস্ময়কর কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোমধ্যেই কুখ্যাতি অর্জন করেছে। গত সাড়ে তিন বছরে তাদের মেয়াদকালে অনেক অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের জনস্বার্থবিরোধী মানসিকতারই প্রকাশ পায়নি, তাদের অসততা ও অযোগ্যতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু করার কোন ইচ্ছা তাদের নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১৮ সালে নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশন আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। এবার আর প্রার্থী নয়, ৩ শ আসনে নির্বাচন আয়োজিত হয় প্রায় ভোটারবিহীনভাবে। বিরোধী দলগুলোর প্রার্থিতা বাতিল, প্রার্থী-কর্মী-এজেন্ট গ্রেপ্তার বা এলাকাছাড়া হওয়ার পর এ নির্বাচনে ভোটারদেরও কষ্ট করতে দেয়নি কমিশন। নির্বাচনের আগের রাতে ভোট বাক্স ভরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রকৃত ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বহু কেন্দ্রে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে সৃষ্টি হয় ভোটের নতুন নতুন রেকর্ড। এমন নির্বাচন আয়োজন করে বুক ফুলিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থী, এজেন্ট, পর্যবেক্ষক, ভোটার কারও নিরাপত্তা দিতে আগ্রহী নয় কমিশন, এটি দেখা গেছে আগের নির্বাচনে। যথেষ্ট ক্ষমতাবান হয়েও তারা প্রশাসন আর পুলিশকে তাদের অন্যায় কাজে বাধা দেয়নি। সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হাজারও অভিযোগের পরও তাদের প্রার্থিতা বাতিল বা মৃদু কোনো শাস্তিরও ব্যবস্থা নেয়নি। কাজেই অযথা ক্ষমতার বাতাবরণ রেখে প্রয়োজন কী? সামনের নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে পারবেন, সেটি নির্ধারণের ক্ষমতাও মনে হয় সরকারকে দিয়ে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন এখন আর স্বাধীন নেই। তারা সরকারের হুকুম তামিলের জন্য আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কমিশন সরকার নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় সকল কাজ করছে। এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হলো জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রকল্প কমিশন সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব। এটা হলে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা সরকারের কাছে চলে যাবে। ফলে সরকার নিজের ইচ্ছামতো ভোটার তালিকা প্রণয়নের সুযোগ পাবে। সেই ভোটার তালিকায় প্রকৃত ভোটার নয়, সরকারি দলের পছন্দের লোকজনকে স্থান করে দেওয়া হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’