বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকল্প: ব্যয় বাড়ছে দ্বিগুণ, মেয়াদ ২ বছর
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৩৩
ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রকল্প। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ৫৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এ অবস্থায় ফের প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ছে ২ বছর। সেই সঙ্গে ব্যয়ও বাড়ছে দ্বিগুণ। এ জন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ইতোমধ্যেই প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আরও তিনটি প্রকল্প এদিন একনেকে উপস্থাপন করা হবে। ভার্চুয়াল প্রক্রিয়ায় গণভবন থেকে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুরের অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক মূল প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুমোদন দেয় একনেক। পরবর্তীতে মেয়াদ না বাড়লেও ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধন করা হয়। এবার ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনের প্রস্তাব করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৭০ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১৬০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এখন নতুন করে ৭৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ৪৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পের শুরু থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের ৭৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বন অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ অনুমোদিত ১০ একরের পরিবর্তে কমিয়ে ৮ দশমিক ৫২৬ একরে আনা হয়েছে। এছাড়া ৮ দশমিক ৫২৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ১২৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা প্রয়োজন, যা অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৬৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেশি। সাফারি পার্কের বাইরের চারদিকে মেটাল অ্যাপ্রোচ রোড ৭ কিলোমিটারের পরিবর্তে ৫ দশমিক ২৬৫ কিলোমিটারে আনা হয়েছে। ৫ দশমিক ২৬৫ কিলোমিটার মেটাল অ্যাপ্রোচ রোড প্রশস্তকরণে ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন, যা অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৮ কোটি ২১ লাখ টাকা বেশি। এছাড়া দুটি সেতু নির্মাণ বাবদ ১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন, যা অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বেশি। বর্তমান অবস্থায় অবকাঠামোগত নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রমসহ ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করতে অতিরিক্ত দুই বছর সময় প্রয়োজন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শালবনের প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর বংশ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি, ইকোট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ইত্যাদি উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ১ হাজার ৪৯৪ হেক্টর এলাকায় ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক স্থাপন করা হয়। এরপর সাফারী পার্কের বহিঃস্থ ও অভ্যন্তরীণ এলাকায় যানজট হ্রাস, পার্কে বিদ্যমান বন্যপ্রাণী এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধানসহ বিনোদনের সুবিধা ও পার্কের বিদ্যমান মাস্টার প্ল্যান উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর পর দ্বিতীয়বার সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বাইরে ও ভেতরে যানজট হ্রাস, পার্কে বিদ্যমান বন্যপ্রাণী এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধান, বিনোদনের সুবিধাদি উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক মানের জন্য পার্কের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে প্রকল্পটি কার্যকর ভুমিকা রাখবে। সেজন্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।’
একনেকে উঠতে যাওয়া অন্য ৩ প্রকল্প
আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প।