স্বামী হত্যায় স্ত্রীকে জামিন দেননি হাইকোর্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৫৭
ঢাকা: স্বামীকে খুনের মামলায় জামিন পাননি স্ত্রী জীবন্নাহার। স্বামী রফিকুল ইসলামকে হত্যা মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ তার আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন। রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ তাফসিরুল ইসলাম।
ড. মো. বশির উল্লাহ বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলার চালায় জীবন্নাহার নামে এক মহিলা তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। প্রথমে তার স্বামীকে গামছা পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যা করার পর মৃতদেহটিকে ওয়ার্ডরোবে ঢুকিয়ে রাখে। পরের দিন মৃতদেহটিকে বের করে দুইটি পা কাটে, দুটি হাত কাটে এবং মাথা কেটে আলাদা করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়। এ মামলায় আজ জীবন্নাহার জামিন চাইলে হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে দেন।’
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি সকালে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পর মেরে স্বামী খাটে শুয়ে থাকেন। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগে স্ত্রী জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে খাট থেকে নিচে পড়ে যান। এমতাবস্থায় স্ত্রী উপর্যুপরি ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম।
এক পর্যায়ে গামছা দিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘরে থাকা ওয়ারডোবে মৃতদেহটি লুকিয়ে রেখে জীবন্নাহার কারখানায় চলে যান। পরে কারখানা থেকে রাতে বাসায় ফিরে মৃতদেহটি ওয়ারডোব থেকে বের করে বটি দিয়ে দুই হাত কনুই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মাথা-হাত-পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশ ঝাড়ে, পা দুটি অদূরে টয়লেটের পাশে এবং মাথা, দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশ ঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে দুপুরে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করেন এবং স্ত্রী জীবন্নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদকালে জীবন্নাহার খুনের ঘটনা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে রফিকুলের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জীবন্নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আটক জীবন্নাহারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁনমিয়ার মেয়ে জীবন্নাহারের বিয়ে হয়।
তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রোজা বেশিরভাগ সময়ই তার নানীর বাড়ি থাকতো। ঘটনার দিন রোজা বাসায় ছিল না।
চাকরির সুবাদে রফিকুল ইসলাম স্ত্রী জীবন্নাহারকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ির মেঘনা কারখানার সীমানা প্রাচীরের পাশে গিলার চালা এলাকার আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল স্থানীয় ‘হাউ আর ইউ’ টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে এবং স্ত্রী স্থানীয় মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় সুয়িং অপারেটর পদে চাকরি করেন। স্বামী বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর স্ত্রী বেতন বেতন পান ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময় স্বামী তার স্ত্রীর বেতনের টাকা তার কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন্নাহার বেতনের টাকা তার কাছে না দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।