৮ জেলায় হচ্ছে শান্তি নিবাস, শিশুদের সঙ্গে থাকবেন প্রবীণরাও
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:১১
ঢাকা: প্রবীণদের জন্য শান্তি নিবাস স্থাপন করা হচ্ছে আট জেলায়। সরকারি আটটি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট এ শান্তি নিবাস স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে প্রবীণদের সঙ্গে সহাবস্থানের ভিত্তিতে পারিবারিক আবহে শিশুদের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আটটি সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শান্তি নিবাস স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়িত হলে অবহেলিত প্রবীণদের পরিচর্যা, নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সব চাহিদা নিরূপণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে সমাজ সেবা অধিদফতর।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) যেকোনো বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হবে। তারা জানান, যেসব জেলায় শান্তি নিবাসগুলো স্থাপন হবে সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবীণদের সঙ্গে সহাবস্থানের ভিত্তিতে পারিবারিক আবহে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য শান্তি নিবাস স্থাপন করা হবে। আটটি বিভাগের আটটি সরকারি শিশু পরিবারের ভেতর আটটি শান্তি নিবাস করার জন্য প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ আছেন। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। এই হারে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের আগেই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে, যার বিশাল প্রভাব পড়বে শ্রমবাজারের ওপর। জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, ২০৪৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় প্রবীণদের সংখ্যা বেশি থাকবে। বাংলাদেশে এখন ৬৮ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। কিন্তু তিন দশক পরে প্রবীণদের সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে দেশের সার্বিক উৎপাদনে একটি বড় ঘাটতি দেখা দেবে। এই বয়স্ক মানুষদের যদি সমাজের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বিত করা না যায় তাহলে এক সময় তার বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান হারে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠির সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার কোটি। ২০১৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রবীণদের ৫৮ শতাংশের দারিদ্র্যের কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণের সামর্থ্য নেই। সেখানে তাদের বৃদ্ধ বয়সে সেবা পাওয়াটা যে কতটা কঠিন তা বাহুল্য।
প্রবীণরা স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের সঙ্গেই থাকতে চান এবং সামাজিকভাবে সেটাই হয়ে আসছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামোতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের জন্য যথেষ্ট সেবা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। জনসংখ্যাবিদরা বলেছেন, প্রবীণদের আনুষ্ঠানিক সেবার প্রয়োজনীয়তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বিশেষ করে কয়েক দশক পরেই একজন কর্মক্ষম মানুষের ওপর প্রবীণ জনগোষ্ঠীর যে চাপ পড়বে, তা সামাল দেওয়া অনেকের জন্যই বেশ কঠিন হবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটা সময় একজন কর্মক্ষম মানুষকে তিনটি প্রজন্মের দায়িত্ব নিতে হবে। তার নিজের, মা-বাবার ও দাদা-দাদীর। তিনটি প্রজন্মের দায়িত্ব নেওয়ার মতো অর্থনৈতিক অবস্থাতো সবার থাকবে না।
উল্লেখ্য, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারের কিছু কার্যক্রম রয়েছে। সবচেয়ে বড় কার্যক্রমটি হচ্ছে- বয়স্ক ভাতা, যার আওতায় ৪৪ লাখ প্রবীণকে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব কার্যক্রম প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য দেশের ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারে প্রবীণদের জন্য শান্তি নিবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।