Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাস লাইনের ছড়াছড়ি, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা


১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:১০

সাভার: শিল্পাঞ্চল এলাকা আশুলিয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাসিন্দাদের গ্যাসের চাহিদা। আর অধিক চাহিদাকে পুঁজি করে এই এলাকায় অবৈধভাবে জ্বলছে প্রায় ৮১ হাজার চুলা। নিম্নমানের পাইপ লাইন দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় যেকোন সময় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণ ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।

ঘন ঘন অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবার সংযোগ প্রদান করেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এসব সংযোগে ব্যবহার করা পাইপ নিম্নমানের হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান চলমান থাকলেও আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সংযোগ প্রদানকারীরা।

বিজ্ঞাপন

তিতাস গ্যাস টি অ্যান্ড ডি কোম্পানি লিমিটেড সাভার আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৬৫টি স্পটে ৭০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ২০৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সংযোগের ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৮০টি বিভিন্ন সাইজের পাইপ, ১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮০টি বার্নার জব্দ করা হয়।মামলা করা হয় ১২টি। এসব মামলার ১৪ আসামিকে গ্রেফতার ও জেল জরিমানা করা হয়। তবুও অবাধেই চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ।

সাভার তিতাস গ্যাসের জোনাল অফিসের তথ্য মতে, এখনও প্রায় ৪২টি পয়েন্টে আনুমানিক ৫৮.১০ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগে প্রায় ৮১ হাজার ২০০টি চুলা অবৈধভাবেই জ্বলছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৭টি। এসব দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে ও দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন শিশুসহ অন্তত ১৩ জন। দুর্ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই ঘটছে কাঠগড়া, ঘোষবাগ, পানধোয়া ও মানিকগঞ্জ পাড়া এলাকায়। তবুও এসব এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ অবাধেই ব্যবহার করছেন বাড়িওয়ালা। আর সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়ার তাজপুর এলাকার অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করা এক বাড়িওয়ালা বলেন, আমাদের তাজপুর এলাকায় তিনটি বাড়ি। এর মধ্যে একটি বাড়িতে গ্যাস সংযোগ নেই। তাই কম ভাড়াতেও ভাড়াটিয়া থাকছে না। এত টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। ঠিকঠাক মতো কিস্তিই দিতে পারবো না। এসব এলাকায় গ্যাস ছাড়া শ্রমিকদের অনেক কষ্ট হয়।

আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার শ্রমিক তাসলিমা বলেন, সকাল ৮টায় আমাদের অফিস শুরু হয়। তিনদিন ৫ মিনিট নির্ধারিত সময়ের বেশি অতিবাহিত হলে এক দিন অনুপস্থিত বলে গণ্য করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ডিউটি করে আবার সকালে লাকড়ি দিয়ে রান্না করা খুব কষ্টকর। গ্যাস আমাদের জন্য খুবই জরুরী। তবে নিরাপদ ও বৈধ গ্যাস সংযোগ চাই আমরা।

এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর এক হুশিয়ারিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিজেরাই উচ্ছেদ করতে শুরু করেছে গ্যাস চোরা কারবারিরা। গত ১২ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকার পশ্চিমপাড়া, প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন এলাকা, ক্যামিকেল রোড ও পূর্বপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন স্থানীয় আওয়ামী নেতা মজিবর রহমান। তিতাস কর্তৃপক্ষের দাবি, মজিবর রহমানের ভাতিজাসহ কয়েকজন এই অবৈধ এই গ্যাস সংযোগ প্রদান করেছিলেন। গত ৫ মে তিনি আরও একবার নিজ উদ্যোগে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন।

তিতাস গ্যাস টি অ্যান্ড ডি কোম্পানির সাভার আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম বলেন, আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে সাভার আশুলিয়ায় অবৈধ প্রায় সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলাম। কিন্তু করোনাকালে আবারও চোরা কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমাদের কর্মকান্ড বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে তারা আবার গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। এসব সংযোগ আবার আমরা উচ্ছেদ করা শুরু করেছি। যারা এসব সংযোগ দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ আশুলিয়া সাভার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর