রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:০৯
ঢাকা: চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশের রফতানি আয়ে ২ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এই সময়ে আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। কৃষি, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ, হ্যান্ডিক্রাফট ও হিমায়িত মাছসহ বেশিরভাগ খাতের রফতানি আয় খুবই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। তবে, প্রথম দুই মাসে রফতানি আয়ের প্রধান খাত পোশাকে গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা কম আয় হয়েছে। তা সত্ত্বেও সামগ্রিক রফতানির এই ধারাকে ‘ইতিবাচক’ হিসাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। আর রফতানি আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
একক মাস হিসাবে আগস্টে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। মাসটিতে আয় হয়েছে ২৯৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গেল অর্থবছরের আগস্ট মাসে ২৮৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের আগস্টে আয় বেড়েছ ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এর আগে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রফতানি করে ৩৯১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের জুলাইয়ের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই অঙ্ক লক্ষ্যের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল।
ইপিবি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে পণ্য রফতানি করে ৬৮১ কোটি ডলার আয় করার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। এই সময়ে আয় হয়েছে ৬৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক শতাংশ বেশি। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে আয় হয়েছিল সময়ে ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ডলার। গত বছরের চেয়েও জুলাই-আগস্ট সময়ে দেশে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সার্বিকভাবে রফতানি বাড়লেও ইপিবি’র তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই দুই মাসে পোশাক রফতানি থেকে যে আয় হয়েছে, গত বছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে তার চেয়ে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ আয় বেশি হয়েছিল। তবে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
জুলাই-অগাস্ট সময়ে এই খাত থেকে ৫৭১ কোটি ২৯ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৬১ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৫৭১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। জুলাই-অগাস্ট সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩১১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ওভেন পোশাক রফতানি করে আয় করেছে ২৫৯ কোটি ৮১ লাখ ডলার। খাতটিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এদিকে, জুলাই-অগাস্ট সময়ে ১৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এই আয় ১ শতাংশের মতো বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রায় সব ক’টিতেই রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া ওষুধ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশ। কৃষি পণ্য রফতানি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রফতানি বেড়েছে ৬০ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি কমেছে ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রফতানি কমেছে ১০ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
মন্তব্য জানতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের রফতানি আয়ে আমরা একটি ইতিবাচক ধারা দেখতে পাচ্ছি। অনেকগুলো পণ্যে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শুধু একটি পণ্যে নয়, অনেকগুলো পণ্যের ক্ষেত্রে পজিটিভ সাইন আছে। ইউরোপের ব্র্যান্ড বায়াররা হয়তো বাংলাদেশে অর্ডার বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী মাসগুলোতেও রফতানি আয়ে সম্ভবত এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে।’