রেজাউলের পক্ষে সরব মাহতাব-নাছির
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্থগিত হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে নিজেদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন দলটির নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়র পদ থেকে আ জ ম নাছিরের বিদায়ের পর এখন চসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। বিভিন্ন মহল থেকে রেজাউলের পরিবর্তে সুজনকেই আগামী চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ অবস্থায় অনেকটা হঠাৎ করেই রেজাউলের পক্ষে সরব হয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন নগর কমিটির দুই শীর্ষ নেতা।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে রেজাউল করিমের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি। সভায় চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত হলেও বক্তব্য দেননি।
সভায় মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূল স্তর থেকে দলকে সংগঠিত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে আমাদের বিজয়ী করতে হবে। নৌকা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের প্রতীক। এই নৌকা যার হাতে নেত্রী তুলে দিয়েছেন, তাকে বিজয়ী করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।’
আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। নেত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, তিনি একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনীতিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনি প্রতিশ্রুতি যেগুলো দিয়েছেন নগর উন্নয়নে, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরে তাকে বিজয়ী করতে আমরা তার পাশে থাকব।’
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরে ঐক্যের ভিতকে আরও মজবুত করতে হবে। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে এমন কোন শক্তি নেই, আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে পারে। অবশ্যই সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’
গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সেটি স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হয় গত ৫ আগস্ট। এর আগেই খোরশেদ আলম সুজনকে চসিকের প্রশাসক পদে মনোনীত করে সরকার। ৬ আগস্ট সুজন দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চসিকে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে এবং হকারদের ফুটপাত ও রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া, ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কারসহ নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে একের পর এক কার্যক্রম চালিয়ে এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছেন সুজন। নগর আওয়ামী লীগে সুজনের অনুসারীরাও একাট্টা হয়েছেন তার পক্ষে। আগামী চসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে কি না— এমন আলোচনাও চলছে।
স্থগিত চসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সমর্থনপুষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিত। আবার নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নওফেল বলয়ের অবস্থান নাছিরের বিরুদ্ধে। এ কারণে রেজাউল যখন মনোনয়ন পান, তখন মনোনয়নবঞ্চিত নাছির তার পক্ষে থাকবেন কি না, সেটা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছিল।
চসিক নির্বাচনে সুজনও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বঞ্চিত সুজনকে পরে প্রশাসক করা হয়েছে। সুজনের দায়িত্ব নেওয়ার একমাসের মধ্যেই নানা মেরুকরণ শুরু হয়েছে নগর আওয়ামী লীগে। এর আগে গত ১০ আগস্ট নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীনের ‘বিশেষ আগ্রহে’ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারমুক্ত করার প্রস্তাব পাস করে পাঠানো হয় কেন্দ্রে। ১২ আগস্ট রেজাউল করিমের প্রস্তাবে তার বাসায় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়। চার দিনের মাথায় আবার বর্ধিত সভা করে রেজাউল করিমের প্রতি সমর্থন পুর্নব্যক্ত করা হয়েছে।
ধারাবাহিক এসব কার্যক্রমে নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল জেগেছে— সুজনকে ঠেকাতেই কি বিরোধী বলয়ের রেজাউলের পাশে দাঁড়িয়েছেন মাহতাব-নাছির?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের একজন সহসভাপতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হঠাৎ করেই সরব হয়ে উঠেছেন। যে সভায় মাহতাব উদ্দিনকে ভারমুক্ত করার প্রস্তাব পাস হয়েছে, সেই সভার এজেন্ডা কমিটির সদস্যদের আগে জানানো হয়নি। রাত ৮টায় মোবাইলে এসএমএস দিয়ে পরদিনের সভার কথা জানানো হয়েছে। এজন্য আটজন সহসভাপতির একজনও সেদিনের সভায় ছিলেন না। গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন।’
সার্বিক বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমাদের ধারণা, আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকদিন নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। ত্রাণ দেওয়ার মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। এখন যেহেতু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’
রেজাউল করিমের প্রতি হঠাৎ সমর্থন পুর্নব্যক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। তফসিল এখনো বাতিল হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী রেজাউল করিম চৌধুরীই কেন্দ্রঘোষিত মেয়র প্রার্থী। সুতরাং উনার পক্ষেই আমাদের অবস্থান থাকবে— এটাই স্বাভাবিক। প্রার্থী পরিবর্তনের এখতিয়ার তো আমাদের নেই। এটা মনোনয়ন বোর্ডের বিষয়। যদি কোনো কারণে প্রার্থী পরিবর্তন হয়, তখন নেতাকর্মীরা অবশ্যই সেই প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন।’
নগর আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে জানান, সভায় মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা ও কাউন্সিলর পদে যেসব বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে। তৃণমূলের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটিতে মৃত্যুজনিত কারণে শূন্যপদ পূরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় সহসভাপতি সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ, পশ্চিম মাদারবাড়ীর সভাপতি হাজী আলী বক্স, উত্তর পাঠানটুলীর সভাপতি আবদুল হান্নান, দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের সভাপতি মো. ইসমাইল, জালালাবাদ ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ আহমদ চৌধুরী, শুলকবহর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শেখ সরওয়ার্দী, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. হাসান, জামালখান ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিথুন বড়ুয়া, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন নিজু, সরাইপাড়া ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফুল হক খুশি বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সুনীল কুমার সরকার, উপদেষ্টা শফর আলী, শেখ মোহাম্মদ ইছহাক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বদিউল আলম, নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী, হাসান মাহমুদ হাসনী, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, জোবাইরা নার্গিস খান, দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল আহাদ, আবু তাহের, জহরলাল হাজারী, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল মনসুর, গাজী শফিউল আজিম, কামরুল হাসান ভুলু, নুরুল আবছার মিয়া, জাফর আলম চৌধুরী, বখতিয়ার উদ্দিন খান, মহব্বত আলী খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, নেছার উদ্দিন মঞ্জু, মো. ইলিয়াছ, বেলাল আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
আ জ ম নাছির উদ্দিন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী খোরশেদ আলম সুজন চসিক নির্বাচন চসিক প্রশাসক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী