পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা মেনে ত্যাগীদের মূল্যায়নের নির্দেশ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:৪৭
ঢাকা: সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার শৃঙ্খলা অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি আগের বিভাগীয় কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মতামতের সমন্বয়ের যাচাই-বাছাই শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে দুর্দিনের ত্যাগী ও মাঠ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতাদের স্থান দিতে বলেছেন দলীয় প্রধান।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকার বাসভবন গণভবনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভাও গণভবনে অনুষ্ঠিত হলো।
করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত সভায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি জোরদার নিয়ে আলোচনা হয়। দলের যেসব সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের পর এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি, সেই কমিটিগুলো দ্রুত দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলাসহ যেসব ইউনিটের সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি, সেগুলোও দ্রুত পূর্ণ করার নির্দেশ দেন। কমিটি করার ক্ষেত্রে যেন দুর্দিনের ত্যাগী, তথা মাঠ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করে প্রবীণ ও নবীনদের সমন্বয় করা যায়, হয় সেদিকে লক্ষ রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সিনিয়র-জুনিয়র মেইনটেইন করতে হবে। নতুন ও পুরনোদের সমন্বয় করতে হবে। যারা দলের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলেন, অনেকে অভিমানে দূরে আছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ত্যাগীরা অভিমানী হয়, এ কথাটা মাথায় রাখতে হবে। যারা ত্যাগী, তাদের কমিটিতে স্থান দিতে হবে।
এক্ষত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়নের সম্মেলন শেষ করে উপজেলা থেকে জেলা সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান। তিনি বলেন, ওয়ার্ড-ইউনিয়নে আগে সম্মেলন করতে হবে। পাশাপাশি বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির যারা বিভাগীয় টিমে ছিল, তাদের সময়ে যেসব জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সমন্বয় করে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তদের পরামর্শে কমিটি জমা দিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে জমা হওয়া কমিটিগুলো যাচাইয়ের নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক বিভাগীয় কমিটিতে একজন করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি বাকি সদস্যদের নিয়ে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করতে হবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকটি খেয়াল রেখে তৃণমূলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয় সভায়। এজন্য সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার লক্ষ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সমন্বয় করে টিমওয়ারি সাংগঠনিক সফরে নামার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন থেকে সম্মেলন না হওয়া সব স্তরের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের জমা হওয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো দ্রুত ঘোষণা করার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কমিটি ঘোষণা করবেন। এছাড়া চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ তথা দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বেড়ে গেলে দলীয়ভাবে করণীয় ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় বৈঠকে। এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং করণীয় নির্ধারণে পরামর্শ দেন। এছাড়াও পাঁচটি উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করতে সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি।
এর আগে, সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন পর আমাদের এই সভা। করোনাভাইরাসের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশ বলে নয়, বিশ্বব্যাপী এই অবস্থা। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই করোনাকে মোকাবিলা করে আমরা কিভাবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তৃণমূল পর্যন্ত দলকে পুনর্গঠন করার লক্ষ্যে যেসব জেলা ও মহানগর সম্মেলন হয়নি, তাদের কমিটি গঠন করতে হবে। তবে তার আগে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের কাজ শেষ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সারাদেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে আটটি বিভাগীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর সভা শেষে দলীয় সভাপতির শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী দুপুরে নিজের সরকারি বাসভবনে ব্রিফ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৈঠকে আলোচিত সাংগঠনিক নির্দেশনাগুলো তুলে ধরেন তিনি। এর আগে যেসব উপজেলা, জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, তাদের সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কমিটি গঠন করে জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেই কমিটি যারা জমা দেয়নি, তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত কমিটি জমা দিতেই হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলার কমিটি করে জেলা সম্মেলন করার নির্দেশনার কথাও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন সভায়। দলের সভাপতিমণ্ডলীর প্রয়াত দুই সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্যাহ ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মতিন খসরু, আব্দুল মান্নান খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা শেখ হাসিনা সভাপতিমণ্ডলীর সভা সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার