‘কোটি টাকার ব্যবসা, বিলবোর্ডের কথা জিজ্ঞেস করলেই বলে জানি না’
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:১৬
ঢাকা: গুলশান-বনানীসহ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীর বৈধ বিলবোর্ড নেই বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ জন্য তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে তারা। কিন্তু যখনই বৈধ বিলবোর্ডের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তারা বলে আমরা জানি না।’
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন মেয়র।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যত্রতত্রভাবে যারা বড় বড় সাইনবোর্ড, বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যবসা করছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের পাওনা ট্যাক্স তারা দিচ্ছেন না। এ ধরনের বিলবোর্ড একশতভাগ অবৈধ। আমরা এ বিলবোর্ডের পারমিশন দিই নাই। যারা এ ধরনের বিলবোর্ড লাগাচ্ছেন, তাদেরকে সাবধান করে বলছি – এগুলো অবৈধ। এগুলোকে কোনোমতেই আমরা পারমিশন দিবো না। এগুলো সব উচ্ছেদ করব, অপসারণ করবো। এখান থেকে প্রাপ্ত মালামালগুলো স্পট নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করে করবো। আমরা মানুষকে দেখাতে চাই, যারা বিলবোর্ড সাইনবোর্ড লাগাবেন, তারা আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনকে ট্যাক্স দিয়ে তারপর লাগাবেন।’
আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘তারা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। আপনারা দেখেছেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এখানে ব্যবসা করছে, কিভাবে তারা এ কাজটি করে? এরকম অনেক আছে। আমি বলতে চাই, আপনারা যারা এখানে ব্যবসা করছেন, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গুলশানে লাইসেন্স নিয়ে গুলশানে ব্যবসা করতে হবে, মোহাম্মদপুরের লাইসেন্স নিয়ে গুলশানে ব্যবসা করা যাবে না। আবার লাইসেন্সে গুলশানের ঠিকানা দেওয়া থাকলে গুলশানেই ব্যবসা করতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, এটা গুলশান ১ নম্বর, গত পরশুদিন ছিলাম গুলশান ২ নম্বর। এখানে সবাই ব্যবসা করছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশন, সবাই ব্যবসা করছে। যাকেই বৈধ বিলবোর্ডের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি, সে বলে আমরা জানি না। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্সের মধ্যেই পরিষ্কার করে এইসব বিষয়ে লেখা আছে। আপনার সাইনবোর্ড এর মাপ কত, আপনার ট্যাক্স কত, সবকিছু পরিষ্কারভাবে লেখা আছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের। আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে।’
ফুটপাত ও রাস্তায় অবৈধভাবে রাখা নির্মাণসামগ্রীর নিলামও অব্যাহত থাকবে। আসুন একটি সুন্দর ঢাকা শহর গড়ি। পর্যায়ক্রমে ডিএনসিসির অন্যান্য জায়গায়ও এ ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, আজ দিনভর ডিএনসিসির তিন জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচালনায় গুলশান, বনানী ও প্রগতি সরণিতে প্রায় সাত শতাধিক অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। স্পট নিলামের মাধ্যমে এসব সাইনবোর্ড ও অন্যান্য মালামাল ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বিক্রয় করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা করা, ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান করা এবং অন্যান্য অপরাধে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বরে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে প্রায় তিন শতাধিক অবৈধ সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, প্যানাফ্লেক্স ইত্যাদি উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ করা এসব সামগ্রী ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়। এসময় যথাযথভাবে সাইনবোর্ড স্থাপন না করায় এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় শান্তা গ্রুপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বনানী ১১ নম্বর সড়কে অঞ্চল-৭ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ এর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় প্রায় দুই শতাধিক সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ইত্যাদি উচ্ছেদ করা হয়। এছাড়া সড়ক ও ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং অন্যান্য অপরাধে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
প্রগতি সরণির শহজাদপুরে অঞ্চল-৬ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরিনের পরিচালনায় উচ্ছেদ অভিযানে মোট দুই শতাধিক সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ইত্যাদি উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদকৃত এসব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ইত্যাদি নিলামে ২৫ হাজার টাকা নিলামে বিক্রয় করা হয়। এছাড়া ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা করা এবং ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় চারটি প্রতিষ্ঠানকে মোট ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অবৈধ বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ইত্যাদি অপসারণে ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির জনসংযোগ দফতর।