আইন অমান্য করার প্রবণতায় দুর্ঘটনা বেশি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:২২
ঢাকা: সড়কসহ যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য জনসাধারণের অসর্তকতা এবং আইন অমান্য করার প্রবণতাকে দায়ী করলেন আইনজ্ঞরা। দুর্ঘটনা রোধে আইন মানতে বাধ্য করা এবং আইনি প্রতিকার পেতে ক্ষতিপূরণ মামলার করার পরামর্শ তাদের।
বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলা ডটনেটের নিয়মিত আয়োজন ‘সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বার’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ভার্চুয়াল এ আলোচনার এ পর্বের বিষয় ছিল ‘দুর্ঘটনা ও আইনি প্রতিকার’।
সারাবাংলা ডটনেটের পক্ষে ব্যারিস্টার ইফ্ফাত গিয়াস আরেফিনের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ব্যারিস্টার এম শফিকুল ইসলাম।
দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনায় প্রথমেই ফৌজদারি মামলা করা যাবে। এই ক্ষেত্রে যদি মামলা করতে দেরি হয়, তাহলে দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করে মামলাটি করা যাবে। একইসঙ্গে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক বা চালকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলাও করা যাবে। উদাহরণ হিসেবে সাংবাদিক মিশুক মুনির ও চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মামলার কথা বলেন তিনি।
নির্মাণাধীন ভবন থেকে কিছু পড়ে দুর্ঘটনায় কোনো পথচারী কিংবা ভবনে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নির্মাণ শ্রমিক মারা গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিভাবে আইনি প্রতিকার পাওয়া যায়— এমন প্রশ্নের জবাবে আরেক আলোচক আইনজীবী ব্যারিস্টার এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বহুলত ভবন নির্মাণের সময় কোন পথচারী আহত বা নিহত হলে সেটি হবে অবেহলাজনিত অপরাধ। এর জন্য আহত ব্যক্তি বা তার পরিবার কিংবা নিহত ব্যক্তির পরিবার অবশ্যই মামলা করতে পারবে। কেননা কাজের নিরাপত্তার জন্য প্রথমেই ব্যবস্থা গড়ে তোলা মালিকদের দায়িত্ব। আর শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন তারা। অন্যদিকে পথচারী কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেওয়ানী আদালতেও ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারবেন বলে তিনি জানান। অন্যদিকে সার্ভিস সেবাদাতার অবহেলায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জন্যও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সড়ক আইন ২০১৮ অনুযায়ী দোষিকে যখন অর্থদণ্ড করা হয়, সেই অর্থ কি ভিকটিম পরিবার পাবে নাকি সরকারি কোষাগারে যাবে— এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ক্রিমিনাল আইনে যদি কারো সাজা ও অর্থ দণ্ড হয়, তাহলে সে অর্থ সরকারি কোষাগারে যাবে। তবে এখানে ভিকটিমের জন্য ভিন্ন একটি বিধান রয়েছে। ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণের জন্য সেই বিধান অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। সড়ক আইনের তহবিলের কথা বলা হয়েছে। এখন এই তহবিল গঠনের জন্য বিধি তৈরি করতে হবে। ভিকটিমেরা যেন সেই তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
আইনজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার জন্য মূলত আগে যাওয়ার একটা প্রতিযোগিতা থাকে। আইন মেনে চলার মানসিকতা আমাদের নেই। বরং আইন অমান্য করার প্রবণতাই বেশি। সে কারণেই দুর্ঘটনার সংখ্যা আমাদের বেশি।
দুর্ঘটনা কমানোর জন্য আমাদের আইন মেনে চলার প্রতি জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন দুই আইনজীবী। আইন মানতে বাধ্য করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেক ক্ষেত্রেই কমে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তারা।
আইন অমান্য করা আইন মেনে চলা দুর্ঘটনা দুর্ঘটনায় প্রতিকার সড়ক দুর্ঘটনা সারাবাংলা লিগ্যাল চেম্বার