হেফাজতের আমির আহমদ শফী আর নেই
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:১৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জীবনাবসান হয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বর্ষীয়ান এই আলেমের মৃত্যু হয়।
হেফাজত চট্টগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক আ ন ম আহমেদুল্লাহ সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার ফেসবুক পেইজ থেকেও শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে। প্রায় ৩৪ বছর ধরে তিনি মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
প্রায় শতবর্ষী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাঠ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (শাহ আহমদ শফী) দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বুকে পেসমেকার বসানো আছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনসহ আরও বিভিন্ন জটিলতা আছে। এর মধ্যে গত (বৃহস্পতিবার) রাতে নাকি উনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। এরপর থেকে উনার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। হাসপাতালে আনার পর উনাকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। সকাল থেকে উনার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরিস্থিতি নাজুকই বলা যায়। উনি আশঙ্কামুক্ত নন। উনার পরিবারের সদস্যরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকায় নিয়ে যান।’
হেফাজত নেতা আ ন ম আহমেদ উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা হুজুরকে মৃত ঘোষণা করেছেন।’
আরও পড়ুন: ‘আশঙ্কাজনক’ অবস্থায় হেফাজতের আমীর শফীকে নেওয়া হলো ঢাকায়
১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়াটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহমদ শফী। তার পিতা প্রয়াত বরকত আলী ও মা প্রয়াত মেহেরুন্নেছা। তিনি আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৪১ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন।
শফী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি এই মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে ছিলেন। বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি। উর্দু ও বাংলায় তার লেখা ২২টি বই আছে।
দেশের কওমি অঙ্গনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা হয় হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ। আমৃত্যু তিনি সংগঠনটির আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে হেফাজতে ইসলাম দৃশ্যপটে সক্রিয় হয়। তখন শফীর নেতৃত্বে মাদরাসা ছাত্ররা ঢাকায় গিয়ে শাপলা চত্বরে অবরোধ করেন। সে সময় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন তিনি।
মৃত্যুকালে আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা কওমি মাদরাসার পরিচালক।
দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার শূরা কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন নানুপুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা শূরা কমিটির সদস্য যারা চট্টগ্রামে আছি এবং প্রবীণ আলেম হুজুরদের নিয়ে মাদরাসায় বৈঠক হবে। সেখানে বড় হুজুরে জানাজা ও দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
এদিকে প্রবীণ আলেম শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় নওফেল বলেন, ‘তিনি ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন।’