আমনে বাড়ছে মাজরা পোকার আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৮:০৫
নেত্রকোনা: চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও মাজরা পোকার আক্রমণে অনেক আমন ধানক্ষেত বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। সময়মতো ধানক্ষেতে ওষুধ প্রয়োগের অভাবে ধান খেতে মাজরা পোকার আক্রমণ খুব বেশি দেখা দিয়েছে। এখন ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজে আসছে না— এমন দাবিই করছেন কৃষকরা।
সাজিউড়া গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মিয়া, হরিপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, মাসকা গ্রামের চান মিয়া ও দিঘলী গ্রামের মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘মাজরা পোকায় আমাদের ধান ক্ষেত খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। ভিরতাকু নামক ওষুধ ২ বার ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তাকেও এসে পরামর্শ দিতে আমরা দেখিনি।’ মাজরা পোকার পাশাপাশি ইঁদুরেও ধানগাছ কেটে ফেলছে বলেও তারা জানান।
গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বাবলু বলেন, ‘মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষার জন্য কৃষকরা জমিতে স্প্রে করে ওষুধ ছিটিয়ে দিচ্ছেন।’ এসময় তিনি পোকা দমনে কৃষি বিভাগকে আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানও একই কথা জানান।
তবে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার কেন্দুয়া উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে ২০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পোকার কবল থেকে রক্ষার জন্য ভিন্ন কৌশল প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ। ধানক্ষেতে পোকা দমনের জন্য গাছের ডালপালা বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে পার্চিং ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলাকে মোট ৪০টি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগেই কৃষকের আবাদ করা জমির সুবিধা-অসুবিধা ও বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার জন্য একজন করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৪০টি বিভাগের ১৬টিতেই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নেই। ফলে এসব বিভাগের কৃষকরা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের টিপ্রা বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ মিয়া জানান, এই মাজরা পোকাটি অনেক জটিল। এটি ধানগাছের পাতায় ডিম পাড়ে। এর পর নিচে গাছের মূলে গিয়ে ছিদ্র করে ঢুকে ধানগাছের ভেতর লুকিয়ে থাকে। মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় কৃষকদেরকে জমিতে পার্চিং অর্থাৎ ধান ক্ষেতের মাঝেমাঝে গাছের শুকনো ডালপালা অথবা বাশেঁর কঞ্চি পুঁতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে ওই পুঁতে রাখা ডাল পালা বা কঞ্চিতে বসে পাখিরা সহজেই ক্ষেতের পোকা খেয়ে ফেলতে পারে। এভাবে যদি ধান ক্ষেতে কঞ্চি বা ডালপালা পুঁতে রাখা যায় তাহলে কীটনাশক ছাড়াই সহজেই অনেক পোকা দমন করা সম্ভব বলে জানান তিনি।