বিআরটিএকে প্রাতিষ্ঠানিক ইমেজ সংকট থেকে বের হতে বললেন কাদের
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৫০
ঢাকা: বিআরটিএকে প্রাতিষ্ঠানিক ইমেজ সংকট থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে সবাই খারাপ না। গুটিকয়েক অনিয়মকারীর জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়। আমি চাই, আপনারা যে প্রাতিষ্ঠানিক ইমেজ সংকটে আছেন, তা থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে সেবামুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করুন বিআরটিএকে।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আয়োজিত বিশেষ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা চাই, বিআরটিকে সত্যিকার অর্থে একটি জন ও সেবামুখী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে। বিআরটিএ সেবা পেতে এখনও গ্রাহক ভোগান্তির খবর পাই। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারে এ ভোগান্তি কমে আসছে অনেক। এসকল অভিযোগের বিপরীতে বিআরটিএ একটি সেবাবান্ধব গতিশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে ইতোপূর্বে জনবল বাড়ানো হয়েছে। সামনে আরও জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল সেবার আওতা বাড়ানো গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমিয়ে আসতে বাধ্য। আমরা সেটা লক্ষ্য করেছি। তবে এখানেও কোথাও আমাদের বিআরটিএ অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম আছে। ভিতরের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে দালালরা কি করে তাদের দৌরাত্ম প্রদর্শন করে এবং লাইসেন্স নিয়ে জনগণকে হয়রানির মুখে ঠেলে দেয় এবং এখানে একটা নয়ছয় হয়। যেটা সর্ষের মধ্যে ভূত। আমাদের অবশ্যই সে ভূত তাড়াতে হবে।’ এজন্য বিআরটিএ’র নতুন চেয়ারম্যানকে শক্তহাতে এসব অনিয়ম বন্ধে নির্দেশনা দেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাউকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমি ইতোপূর্বে বলেছি অনেক চেনামুখ ঘুরে ঘুরে মিরপুর উত্তরা, সাভারে কাজ করছে। এদের বদলি করলেও আবার অলিগলি দিয়ে আরাধ্য কর্মস্থলে এসে পৌঁছায়। এখানে নিশ্চয়ই টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয় আছে। এবং সেখানে লাভজনক কিছু বিষয় আছে। সেকারণে এই সব জায়গার অফিসের প্রতি অনেকের আকর্ষণ রয়েছে ‘ এ বিষয়টি বিআরটিএর নতুন চেয়ারম্যানকে স্ট্রংলি মনিটর করার আহ্বান জানান এবং বদলি বাণিজ্য যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনৈতিক তদবির করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার কাছে আগে খুব আসত, ইদানিং তেমন আসে না। যে দুই চারটা রাজনৈতিকভাবে অনুরোধ আসে আমি সেটা বিআরটিকেই অবহিত করি।’
সবাইকে সতর্ক করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একথা ঠিক যে সড়ক নিরাপত্তায় আমাদের আর অনেক কাজ করতে হবে। আরও অনেক পথ আমাদের চলতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা প্রতিদিনই হারাচ্ছি মূল্যবান প্রাণ। আর একটি মৃত্যুও আমরা চাই না, চাই না দুর্ঘটনা। যেসব মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে, সেগুলোতে দুর্ঘটনা অনেকটা কম। সড়ক নিরাপত্তা এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলা- এটাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। একথা মনে রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে।’ এ সময় তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করে দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিআরটিএ’ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘বিআরটিএ নিয়ে অভিযোগ অনেক। অভিযোগ শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। আমি নিজেও বারবার ভিজিট করে এই সমস্যার কিছুটা করতে পারলেও পুরোপুরি সমাধান করতে পারিনি। নতুন চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। এই বিআরটিএ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও অভিযোগ করছে। সড়কের বিষয়টি সবার নজরে আসছে। কাজেই আমি প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বৃদ্ধি করার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ করছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিচের দিকে কাজ করে এমন কর্মচারীও মন্ত্রীর এলাকায় বাড়ি সেই সুবাদে সেখানে কর্তৃত্ব খাটাতে চেষ্টা করে। এ ধরনের চেষ্টা বা অপকর্ম যারা করে তাদের ব্যাপারে আমি পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, কারও প্রতি স্বজনপ্রীতি নেই। আপনাদের কাছ থেকে আমি কমিশন পার্সেন্টেজ গ্রহণ করি না, কোনো অপকর্মও নিজে করি না। আমাদের সচিব সাহেবরাও করেন না। আমি অফিসারদের বলব, জনস্বার্থে সবাইকে সততার নিদর্শন- যেটা আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জীবনে লালন করেন, চর্চা করেন, সেটা আপনারা ফলো করবেন- এটা আমার প্রত্যাশা।’
২০ থেকে ২৪ সেপ্টম্বর পর্যন্ত বিআরটিএ’র বিশেষ সেবা সপ্তাহ শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
ওবায়দুল কাদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেজ বিআরটিএ সংকট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী