আস্থার নাম ৯৯৯, খুশি সেবাপ্রাপ্তরা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:০৮
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরুর পর সহযোগিতা পরের কথা, মানুষ ঘর থেকেই বের হওয়ার সাহস পায়নি অনেকদিন। ওই সময়ও সাধারণ মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ৯৯৯। ঘরে খাবার নেই, তাদের পাশে দাঁড়ানো; কেউ বিপদে পড়েছে, তাকে সাহায্য করা; ঘরে কেউ অসুস্থ, তার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা— এমন নানা পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করে নিয়েছে জাতীয় জরুরি সেবার এই হটলাইন নম্বর। আর সে কারণেই এখন সবার মুখে আস্থার প্রতীক ৯৯৯।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-তে কর্মরতরা জানান, অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত রোগীকে ফেরি পারাপার, প্রাণনাশের আশঙ্কা, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি-নিপীড়ন, গৃহকর্মী নির্যাতন, কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে পারিবারিক সমস্যা, শব্দ দূষণ, ছিনতাই— এমন নানা বিপদের সময়েই মানুষের ডাক পেয়েছেন তারা। সাধ্যমতো সব পরিস্থিতিতেই তাদের সহযোহিতা করেছেন তারা।
নাগরিকের জরুরি যেকোনো প্রয়োজনে কোনো একটি মোবাইল ফোন থেকে ৯৯৯-এ বিনা পয়সায় ফোন করা যায়। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এই সেবা। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবাদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ৯৯৯ নম্বরে কেউ ফোন করলে সমস্যার ধরন, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন— কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে ফোনে ওই ব্যক্তিকে কথা বলিয়ে (টেলি কনফারেন্স) সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এই হটলাইন নম্বরটি।
জাতীয় জরুরি সেবা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেবা পেতে এই নম্বরে মোট কল আসে দুই কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ৭টি। এর মধ্যে মোট ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭২টি কলের পরিপ্রেক্ষিতে সেবা দেওয়া হয়েছে, যা মোট কলের ২২ শতাংশ। এর মধ্যে নারীদের এক লাখ ৬১ হাজার ৭৫৪টি ও শিশু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪ লাখ ৫ হাজার ৮৩২ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর গত ১৮ মার্চ থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৯৯-এ মোট কল আসে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩টি। এর মধ্যে জরুরি সেবা দেওয়া হয় ১৮ হাজার ৬৪৯ জনকে। বাকি ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪টি কল ছিল করোনা সংশ্লিষ্ট। এর বাইরে এই সময়ে দুই লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৪ জন কল করেছেন পুলিশের সহায়তা চেয়ে। এ ছাড়া দুর্ঘটনার খবর জানাতে ও নিরাপত্তা চেয়ে এবং অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন এসেছে প্রায় ৪০ হাজার। এই সময়ে ফায়ার সার্ভিস সেবা দেওয়া হয়েছে ৪১ হাজার ৭৫১ জনকে, অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে ৪০ হাজার ১৭২ জনকে।
করোনাকালীন ৯৯৯ নম্বরে কল করে সেবা পাওয়ার মধ্যে অন্যতম বড় ঘটনা ছিল বঙ্গোপসাগরে ডুবন্ত জাহাজ থেকে ১১ জন নাবিককে জীবিত উদ্ধার করা। সুন্দরবনের গহীন থেকে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে ছয় কিশোরকে উদ্ধার এবং মধ্যরাতে ফোন পেয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে প্রসব বেদনায় কাতর নারীকে উদ্ধার করাও ছিল বড় ঘটনা। এছাড়া হাওরে দিক হারিয়ে পড়ে থাকা কিশোরদের উদ্ধার করা, চাকরি হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা যুবককে উদ্ধার করা এবং সরকারি চাল উদ্ধার করার মতো ঘটনাও রয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ৯৯৯ হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে সব মানুষ উপকার পেয়ে আসছে। এই সেবাকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করতে কাজ চলছে। আগে কিছু ফেক কল আসত, তার পরিমাণ কমে এসেছে। এখন মোট কলের সেবা দেওয়ার হার বাড়ছে, যদিও শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গড় হার ২২ শতাংশ।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে। কেমন চলছে এ সেবা— জানতে সম্প্রতি জরুরি সেবার কল সেন্টারে গিয়েছিলেন এ প্রতিবেদক। সরেজমিনে দেখা যায়, চার দিকে শুধু ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দ। দু’টি তলায় সাড়ে চার শতাধিক কর্মী কাজ করছেন। যারা কল রিসিভ করেন, তাদের বলা হয় কলটেকার। তাদের তত্ত্বাবধান করার জন্য আছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা এখানে চার পালায় কাজ করেন তারা। অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য রয়েছে আলাদা ডেস্ক।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আবদুল গণি রোডে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এখান থেকে শুধু পুলিশ নয়, জরুরি প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাওয়া যায়। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই সেবার জন্য ফোন করতে পারেন। ৯৯৯-এ ফোন করতে কোনো খরচ নেই।