‘পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি-জামায়াত’
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে বিএনপি-জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এ অভিযোগ করেন।
সৌদি আরবের জেদ্দায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর অভিমত জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ক্রমাগতভাবে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে বিএনপি। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের দহরম-মহরম অনেক পুরনো। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিএনপিকে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন।’
‘পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সেই সম্পর্ক এখনও অব্যাহত আছে। এর প্রমাণ হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের নেতাদের বৈঠক। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে বিএনপি-জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। নির্বাচনের এখনো অনেক দেরি আছে। নির্বাচনের বাকি আরও সাড়ে তিন বছর আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাসে পৃথিবী স্তব্ধ, মানুষ শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। আর সেইসময় বিএনপি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে। বিএনপি অতীতে ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করে এগুতে পারেনি। যদি পারত তাহলে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে রায় দিয়ে তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতো না।’ এসময় বিএনপিকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন তথ্যমন্ত্রী।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনাকে সমাদৃত করেন। আওয়ামী লীগ মনে করে সমালোচনা পথচলাকে আরও শাণিত করে। সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও বিকাশের নীতি নিয়ে কাজ করছে। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪’শ। এখন বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্র সাড়ে ১২০০। তখন অনলাইন পত্রিকা ছিল হাতেগোণা কয়েকটি। এখন কয়েক হাজার অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯৬ সালে। ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন প্রাইভেট টেলিভিশন ছিল দশটি। এখন ৩০ টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে, ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশনের জন্য লাইসেন্স দেয়া আছে। এর বাইরে চারটি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চালু আছে।’
বাংলাদেশের মতো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা উন্নত দেশেও নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে মামলা হয়েছিল। মামলার পর তাদের ওপর বিরাট জরিমানা করেছে আদালত, সেই জরিমানা দিতে না পেরে কোম্পানি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে। একজন এমপির বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসির পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আমাদের দেশে সেটি কখনও হয়নি।’
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দৈনিক আজাদী বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে একটি। ঢাকার অনেক পত্রিকার চেয়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সার্কুলেশন অনেক বেশি। আজাদী শুধুমাত্র পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’
দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতি’ এই সেমিনারের আয়োজন করে। স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতির সভাপতি এসএম জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চসিকের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম।
অস্থিতিশীল তথ্যমন্ত্রী পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ষড়যন্ত্র হাছান মাহমুদ