‘জিয়া, খালেদা ও তারেক সম্পর্কে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার হচ্ছে’
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:০৪
ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ তথ্য জানান।
এর আগে, শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু)।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে সম্প্রতিকালে হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সুপরিকল্পিতভাবে যে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় স্থায়ী কমিটির সভায়।’
‘সরকার যখন করোনাভাইরাসে ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যখন সরকারের চরম উদাসীনতায় লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, যখন হাজার মানুষ ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য প্রাণ হারাচ্ছে, যখন সরকারি দলের লুটেরাদের দুর্নীতির কারণে অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও দুর্নীতির কবলে পড়ে দুঃশাসন সৃষ্টি করেছে, জনগণের আস্থা যখন শূন্যের কোটায় তখন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র বলে বিএনপি মনে করে’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক চ্যানেল সরকারের নির্দেশে সম্পূর্ণ বিকৃত, বিকারগ্রস্থ মানসিকতায় তথা কথিত নাটকের নামে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা জনগণের সামনে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম নিয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য পরিবেশন করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের স্বীকৃত খুনী আওয়ামী লীগের নেতা খন্দকার মোশতাক এবং মোশতাকের মন্ত্রী সভায় যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারাই ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট ইনডেমনিটি বিল অনুমোদন করে। খোন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রী সভার সদস্য খোন্দকার আসাদুজ্জামান ১৯৭৯ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তখনও আওয়ামী লীগ মুজিব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেনি।’
সুতরাং আওয়ামী লীগ এখন যতই চেষ্টা করুক ক্ষমতার জোরে মিথ্যা ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করে জিয়াকে হেয় প্রতিপন্ন করার, জনগণকে বিভ্রান্ত কারর, তারা তা পারবে না। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে, সংবিধান সংশোধন করে, মিথ্যা প্রচার করে জিয়াউর রহমানের অবদানকে খাটো করা যাবে না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমীর।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি আরও মনে করে- বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈচারারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ায় তার যে নেতৃত্ব, অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর যে অবদান সেটা জাতি সব সময় শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে মনে রেখেছে। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে তাকে পরাজিত করা যাবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম জাতির সকল সংকটময় মূহূর্তে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে জনগণের স্বার্থের পক্ষে কলম ধরেছে এবং সংগ্রাম করেছে। মহান ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানী সামরিক শাসন, ৬৯ এর গণঅভূত্থান সর্বোপরি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিক, সম্পাদক, সংবাদ কর্মীদের ভূমিকা নক্ষত্রের মতোই উজ্জ্বল গৌরবময়। পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, স্বৈরচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, অবৈধ শাসকদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবময়।’
গণমাধ্যমের সকল পর্যায়ের কর্মী, সাংবাদিক, সম্পাদকবৃন্দকে জনগণের স্বার্থের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, সুশাসনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা পরিকল্পিত মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য দলের অংগ সংগঠন সমূহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, জাসাস, মুক্তিযোদ্ধাদলসহ সকল জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সমূহ কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে সভা, সেমিনার, ওযেবনার, র্ভাচুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় স্থায়ী কমিটির সভায়— জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এখনো চূড়ান্তভাবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কতৃক অনুমোদন পায়নি। বেশ কয়েকটি দেশে উদ্ভাবন ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বিএনপি মনে করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো রকম রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, ও বানিজ্যিক স্বার্থও যেন সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিন প্রপ্তিতে ব্যাঘাত না ঘটায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয় এবং জনগণ যেন কোনো ব্যয় ব্যাতিরকেই এই ভ্যাকসিন পেতে পারে, তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘পাবনা-৪ উপনির্বাচন আবার প্রমাণ করেছে যে, এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার যোগ্য নয়। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধংস করেছে। এই নির্বাচনকে বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়।’