Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপিতে উপেক্ষিত নারী


২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৪৫

ঢাকা: বিএনপি প্রধান একজন নারী হলেও দলটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর অবস্থান একেবারেই নগণ্য। ৫০২ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে নারীর সংখ্যা হাতেগোনা। বিভিন্ন ইস্যুতে গঠিত সাময়িক (টেম্পোরারি) কমিটি, যেমন— জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন কমিটি, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, জাতীয় দুর্যোগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ত্রাণ বিতরণ কমিটিতে তো নারীদের রাখাই হয় না। অথচ দলটিতে হাজার হাজার নারী কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এক-এগার সময়কার এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে। আরপিওতে VIA অধ্যায়টি সংযোজন করে প্রচলন করা হয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সেখানে নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়— ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা খসড়া আইনে দেখা যায় এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা নেই। ৩৩ শতাংশ নারী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের ওপরই ছেড়ে দেয় ইসি। কিন্তু সব মহল থেকে সমালোচনা শুরু হলে, নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে নির্বাচন কমিশন। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন টিকিয়ে রাখতে হলে সব পর্যায়ের কমিটিতে এখন ৩৩ শতাংশ নারী রাখা বাধ্যতামূলক, যদিও তা বাস্তবায়নের জন্য সময় বাড়ানো হচ্ছে।

কিন্তু বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১৯ পদের মধ্যে এই মুহূর্তে নারী সদস্য মাত্র দু’জন। ২০১৬ সালে কমিটি ঘোষণার সময় এই পদে খালেদা জিয়া ছাড়া আর কোনো নারী ছিলেন না। গত বছর বেগম সেলিমা রহমানকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা এই মুহূর্তে এখানে নারী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই জনে। অথচ নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী, ১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে কমপক্ষে ছয় জন নারী থাকতে হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে নারী মাত্র ছয় জন। এরা হলেন— সারোয়ারী রহমান, অধ্যাপিকা তাজমিরী ইসলাম, অধ্যাপিকা ড. শাহিদা রফিক, রোজী কবির, তাহসীনা রুশদির লুনা এবং আফরোজা খান রিতা। অর্থাৎ এখানে মাত্র ৮ শতাংশ নারী রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আরপিও-তে যে ৩৩ শতাংশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটি পূরণ হতে এখনো ঢের বাকি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ৩৫টি। কমিটি ঘোষণার সময় এই পদে নারী ছিলেন মাত্র দু’জন— মিসেস রাবেয়া চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান। সেলিমা রহমানকে গত বছর স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার পর এই মুহূর্তে এখানে নারী সদস্য মাত্র একজন। অর্থাৎ শতাংশের বিচারে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান পদে নারী রয়েছে তিন শতাংশের কম।

বিএনপিতে মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ ছাড়াও সাতটি যুগ্ম মহাসচিব পদ রয়েছে। এ সাতটি পদে  ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুবর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, হারন-অর-রশিদ, আসলাম চৌধুরী দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ দলের গুরুত্বপূর্ণ এই পদগুলোতে একজন নারী সদস্য রাখেনি বিএনপি।

অবশ্য বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে দুইটি পদে দু’জন নারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফজলুল হক মিলন (ঢাকা), মাহবুবুর রহমান শামীম (চট্টগ্রাম) রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (রাজশাহী) নজরুল ইসলাম মঞ্জু (খুলনা) আসাদুল হাবিব দুলু (রংপুর) ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন (সিলেট) কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজীম (কুমিল্লা) এমরান সালেহ প্রিন্সের (ময়মনসিংহ) পাশাপাশি বরিশাল এলাকার জন্য বিলকিছ জাহান শিরিন ও ফরিদপুর এলাকার জন্য শামা ওবায়েদ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানেও শতাংশের হারে নারী রয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ, যা আরপিও’র ৩৩ শতাংশ থেকে যথেষ্ট দূরে।

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদ পাঁচটি। এর একটিতেও নেই নারী সদস্য। অবশ্য সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাতটি পদের মধ্যে তিনটি পদে তিন জন নারী রয়েছেন। তারা হলেন— অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও বেবি নাজনীন। এছাড়া সম্পাদকমণ্ডলীর ৪৪টি পদের মধ্যে নারী রয়েছেন মাত্র তিন জন— মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূর এ আর সাফা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা ও স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা।

এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে সহসম্পাদক পদে এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে বেশ কয়েকজন নারী থাকলেও শতাংশ হারে তা তিন-চার শতাংশের বেশি না। শুধু নির্বাহী কমিটি নয়, বিভিন্ন সময় গঠিত সাময়িক (টেম্পোরারি) কমিটিতে একজন নারীকেও রাখা হয় না।

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য গত ৫ মে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে উপদেষ্টা এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট যে ‘জাতীয় করোনা পর্যবেক্ষণ সেল’ গঠন করে বিএনপি, সেখানে একজন নারীকেও রাখা হয়নি। পাবনা-৪ উপনির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আহ্বায়ক ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের যে কমিটি করা হয়, সেখানেও কোনো নারী সদস্য রাখেনি বিএনপি। এভাবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে উপেক্ষা করছে বিএনপি— এমনটিই অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতংশ নারী রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটার ব্যাপারে আমরা ওয়াকিবহাল। বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনাও হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, সকল পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে।’

‘আর এ বাধ্যবাধকতা শুধু জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষেত্রে। বিভিন্ন সময় আমরা যে টেম্পোরারি কমিটি গঠন করি, সেখানে ৩৩ শতাংশ নারী রাখা বাধ্যতামূলক নয়। তাছাড়া, দুর্যোগ মোকাবিলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত কমিটিসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে নারীদের অতটা ইনভলভ করা যায় না। কেউ এ ব্যাপারে আগ্রহও দেখায় না। তাই, এসব কমিটিতে নারীদের রাখা হয় না,’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

উপেক্ষিত নারী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন কমিটি নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর