হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সিআরপি’তে ইউএনও ওয়াহিদা
১ অক্টোবর ২০২০ ২২:১৭
ঢাকা: রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন দুর্বৃত্তের হামলায় আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতাল থেকে তাকে ফিজিওথেরাপির জন্য পাঠানো হয়েছে মিরপুর সিআরপিতে।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় ওয়াহিদা খানমকে।
ওয়াহিদা খানমের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. জাহেদ হোসেন বলেন, ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। একমাস পর তাকে আবার হাসপাতালে দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো হলেও শতভাগ সেরে ওঠেননি।
তিনি বলেন, ওয়াহিদা খানমের ডান হাত ও ডান পায়ের শক্তি ফিরে এসেছে, যদিও এখনো শতভাগ শক্তি ফেরেনি। তবে তিনি এখন হাত দিয়ে লিখতে পারেন। হাত নাড়াচাড়া করতে পারেন। তার ডান পায়ে কিছু সমস্যা আছে। এর জন্য ফিজিওথেরাপির দরকার হবে। সে জন্য তিনি মিরপুর ১৪ নম্বরে অবস্থিত সিআরপিতে চিকিৎসা নিতে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, ওয়াহিদা খানম যখন প্রথম এখানে আসেন, তখন অপারেশন করার মতো অবস্থায় ছিলেন না। আমরা তাকে অপারেশন করার মতো অবস্থায় নিয়ে এসেছি। এরপর তার অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে তার ব্রেন ঠিকমতো কাজ করছিল না, প্রেশার ঠিক ছিল না। তবে দুই-তিন দিনের মধ্যে তিনি একটু সুস্থ হলেও ডান পাশটি কোনোভাবেই কাজ করছিল না। তবে এক সপ্তাহ পর থেকে তিনি আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করেন। শরীরের ডান পাশটা নাড়াতে শুরু করেন। বিগত প্রায় তিন সপ্তাহের চিকিৎসায় আল্লাহর রহমতে তিনি এখন ডান পাশ পুরোটাই নাড়াতে পারছেন এবং হাঁটতে পারছেন। একটু আগে তিনি হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে গেছেন। এখানে তার অস্ত্রোপচারটা শতভাগ সাকসেসফুল হয়েছে বলতে পারি।
ওয়াহিদা খানমকে সিআরপিতে ফিজিওথেরাপির জন্য পাঠানো হয়েছে। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশাবাদ জানান ডা. জাহেদ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছি, তার ব্রেইন ড্যামেজ ছিল, মাথার খুলির হাড্ডি ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। সেটা আমরা অপারেশন করে তুলে দিয়েছি। ব্রেইনের ড্যামেজটা রিকভার হয়ে গেছে। তিনি এখন হাঁটতে পারছেন।
তিনি বলেন, উনার শারীরিক রিকভারের যা অবস্থা, তাতে আশা করা যায় দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আশা করছি উনার ডিজ্যাবিলিটি থাকবে না। আমরা তাকে একমাস পর ফলোআপে আসতে বলেছি।
জাহেদ হোসেন আরও বলেন, শুরুতে তিনি স্ট্রেচারে শুয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন, আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে হেঁটে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছেন। এটা আমাদের গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট এবং তার জন্য এটা একটা বিরাট সাফল্য বলতে পারি। যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন হয়েছিল, সেখান থেকে তিনি রিকভার করেছেন। আগামী একমাসের মধ্যে ওয়াহিদ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন এবং কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ডা. জাহেদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে ইউএনওকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তার বাবা ওমর আলী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর তাকেও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে আনা হয়।
এদিকে, ১৬ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ওয়াহিদা খানমকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ওই প্রজ্ঞাপনে রংপুরের পীরগঞ্জে ইউএনও হিসেবে কর্মরত তার স্বামী মো. মেজবাউল হোসেনকেও ঢাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব হিসেবে বদলি করা হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াহিদা খানমের চিকিৎসার সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সময়ে তার স্বামী যাতে কাছাকাছি থাকতে পারেন, সে জন্য তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়।
ইউএনও ওয়াহিদা খানম ওয়াহিদা খানম ছাড়পত্র ফিজিওথেরাপি সিআরপি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র