Wednesday 09 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় বেগমগঞ্জের গৃহবধূকে শ্লীলতাহানি’


৫ অক্টোবর ২০২০ ১৫:১৫ | আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৪২
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করার পর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাবার বাড়ি চলে এসেছিলেন ওই গৃহবধূ। স্থানীয় কথিত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার তখন থেকেই সুযোগ খুঁজছিল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার। সে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই তাকে বিবস্ত্র করে নিপীড়ন চালানো হয়েছে।

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। সোমবার (৫ অক্টোর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব-১১-এর সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ অক্টোবর) গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, ঘটনা জানার পরই র‌্যাব গোয়েন্দারা অনুসন্ধান চালাতে থাকেন। পরে র‍্যাব-১১-এর একটি আভিযান দল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে বিশেষ অভিযান চালায়। এ সময় বেগমগঞ্জের সন্ত্রাসী দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান ও গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত দেলোয়ারকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের ফাঁড়িরগড় গলি এলাকার একটি প্লাস্টিক কারখানা থেকে মামলার প্রধান আসামী মো. নুর হোসেন ওরফে বাদলকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন-

লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল বলেন, গ্রেফতার দেলোয়ার ও বাদলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ওই গৃহবধূর স্বামী তার বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানে ‘অনৈতিক’ কাজ হচ্ছিল অভিযোগে কথিত দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা তার ঘরে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে ওই নারীকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতন করেন। সেই সঙ্গে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করা হয়।

র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক বলেন, নির্যাতনের ভিডিওধারণের পর থেকে তারা এটি সামাজিক মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই নারীর কাছ থেকে টাকা দাবি করতে থাকে এবং কুপ্রস্তাব দেয়। জানা গেছে, এ কাজে জড়িতরা সবাই ওই এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। কথিত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার এলাকায় একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাদের ভয়ে স্থানীয়দের ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাদলকে বেগমগঞ্জ থানায় ও দেলোয়ারকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল বলেন, অপরাধীদের কোনো পরিচয় নেই। আমরাও অপরাধীদের পরিচয় দেখতে চাই না। আমাদের কাছে অপরাধী অপরাধীই। তার অন্য কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভিডিওটি কে বা কারা ভাইরাল করেছে এবং কার কাছ থেকে ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানিয়েছে, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই তারা ওই নারীকে নিপীড়ন করেছে।

রোববার ভাইরাল হয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে তার মুখমণ্ডলে উপুর্যপুরি লাথি মারছে দুর্বৃত্তরা। ভিডিওধারণের সময় গৃহবধূ বখাটেদের বহুবার পায়ে ধরে কাকুতি-মিনতি করেছেন। তিনি দুর্বৃত্তদের বারবার বাবা-বাবা বলে ডাকলেও তারা ভিডিওধারণ বন্ধ রাখেনি। জঘন্য ও নারকীয় কায়দায় ওই গৃহবধূকে তারা নির্যাতন করতে থাকে। শুধু তাই নয়, ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হবে এবং লাইভ করতে হবে বলেও ওই সময় একে অন্যকে জানায় নির্যাতকরা।

জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বিয়ে হয় তিন বছর আগে। পরে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে তিনি বাবার বাড়িতে থাকতেন। স্বামীর সঙ্গে অনেকদিন হলো যোগাযোগও নেই তার। এর মধ্যে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর স্বামী তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। পরে রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার কথিত বাহিনী নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে, তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ এনে মারধর ও ধর্ষণচেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে তাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে ওই অবস্থার ভিডিও ধারণ করে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।

ঘটনাটি সেপ্টেম্বর মাসের হলেও গতকাল ভিডিও প্রকাশের পর টনক নড়ে প্রশাসনের। নোয়াখালী পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে ওই ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে রাতেই নির্যাতন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সাত জনের নাম উল্লেখ এবং আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়।

এ ঘটনায় দেলোয়ার ও বাদলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এছাড়া নোয়াখালী পুলিশ গ্রেফতার করেছে আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাকে। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় জড়িত মোট ৯ জনকে চিহ্নিত করেছেন তারা।

গৃহবধূকে বিবস্ত্র গ্রেফতার টপ নিউজ দেলোয়ার দেলোয়ার বাহিনী বাদল বিবস্ত্র করে নিপীড়ন যৌন নিপীড়ন র‍্যাব র‌্যাবের অভিযান