মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে রাবি শিক্ষকের জালিয়াতি
১০ অক্টোবর ২০২০ ১০:৩৬
রাবি: জাল সনদ দিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় ছুটি বাড়াতে দফায় দফায় জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রথমে শিক্ষা ছুটি নিলেও ছুটি বাড়াতে মাতৃত্বকালীন জাল সনদ ব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপনেরও অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ড. সালমা সুলতানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক।
রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, ড. সালমা সুলতানা গত ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ২ বছর ছয় মাস সাতদিন (শিক্ষাছুটি ও অন্যান্য) ছুটি ভোগ করেছেন। এরপর বিভাগীয় প্লানিং কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ১ এপ্রিল ২০১৭ থেকে ১ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত তিন দফায় প্রফেসর সালমাকে ২ বছর ১ দিন পূর্ণবেতনে শিক্ষাছুটি দেয়া হয়।
বিভাগের প্লানিং কমিটি জানায়, বারবার ড. সালমা ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করলে ছুটির যথার্থতা ও গবেষণার অগ্রগতির বিষয়ে তার সুপারভাইজারের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তখন তার জার্নাল পেপার সাবমিশনের প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে বলে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের ৫ ও ৬ মার্চ তার সুপারভাইজার জানায় ড. সালমার রিকমান্ডেশন লেটারটি তার লেখা নয় এবং ২০১৮ সালেই ড. সালমার সঙ্গে তার সুপারভিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ড. সালমা কর্তৃক রিকমান্ডেশন লেটার দুটি ভুয়া দাবি করেন তিনি।
বিভাগের প্লানিং কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ৫০১তম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় এই অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম কবিরকে আহ্বায়ক করে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজিনা লজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. রুস্তম আলী আহমেদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, ড. সালমার প্রসবজনিত সনদের বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অফিসিয়াল মেইল থেকে সনদটির ছবিসহ একটি মেইল করা হয় সনদে স্বাক্ষরকারী চিকিৎসক ডেলের কাছে।
প্রতিউত্তরে ডাক্তার ডেল মেইল করে জানান, ‘এই স্বাক্ষর ও সনদটি আমার। কিন্তু সালমা সুলতানা আমার কাছে কোন চিকিৎসা গ্রহণ করেননি।’
ছুটি নিয়ে জালিয়াতি করায় তার ছুটির জন্য সমস্ত সুপারিশ বন্ধ করে দেয় বিভাগীয় প্লানিং কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শিক্ষক সালমার আর কোন শিক্ষা ছুটি পাওনা না থাকায় স্বপদে বিভাগে যোগদানের জন্য গত ২০ মে ২০১৯ তারিখে রেজিস্ট্রার দফতর থেকে স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে প্রাপক না থাকায় স্থায়ী ঠিকানা থেকে চিঠি ফেরত আসে আর অস্থায়ী মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা থেকে ওই চিঠির জবাব দফতরে আসেনি।
তাই সেই বছরের ২৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯২তম সিন্ডিকেট সভার ৬৩ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক পত্র ইস্যুর তারিখ থেকে দুই মাসের মধ্যে স্বপদে বিভাগে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয় শিক্ষক সালমাকে। নির্ধারিত সময় ১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখের মধ্যে স্বপদে যোগদানে ব্যর্থ হলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে অবসিত (টারমিনেট) হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর সালমা সুলতানা শিক্ষা ছুটি নেন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, তিনি লন্ডনে থাকার কারণে যুক্তরাজ্যের গ্রীণকার্ড বা নাগরীকত্ব পেয়েছেন যেটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত অবগত নয়।
জানতে চাইলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, বিভাগের কাছে ড. সালমা সুলতানার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট চাইলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দিয়েছি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখার দায়িত্ব এখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. আব্দুল আলিম বলেন, ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. সালমা সুলতানা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বাইরে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করেছেন। তার যোগদানপত্রটি এখনও গৃহীত হয়নি।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক গোলাম কবির বলেন, আমাকে এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনেছি। আমি এখনও চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো।
প্রফেসর সালমা সুলতানার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলবেন না বলে ফোন কেটে দেন।