৫ বছরে অগ্রগতি ১১%— সময় বাড়ছে ৪০ মাস, ব্যয় ৪৭৬৩ কোটি টাকা
১১ অক্টোবর ২০২০ ১১:২৪
ঢাকা: গতি নেই এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর চারলেন সড়ক প্রকল্পে। গত পাঁচ বছরে এর অগ্রগতি মাত্র ১১ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পটিতে ব্যয় বাড়ছে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেইসঙ্গে মেয়াদ বাড়ছে ৩ বছর ৪ মাস। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় এটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৯ হাজার ৩৫৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের তহবিল থেকে ৫ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক অংশটি জাতীয় মহাসড়ক এবং এর দৈর্ঘ্য ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর যানবাহন চলাচলে এ মহাসড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মহাসড়কটি ব্যবহার করে বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত ও নেপাল এবং বুড়িমারি দিয়ে ভারত ও ভুটানের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সড়ক সংযোগ স্থাপনের জন্য মোট ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে থেকে ২০২১ সালের আগস্টে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির মূল ডিপিপি ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পটি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করে সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন করিডোর ৪ ও ৯, এশিয়ান হাইওয়ে-২, বিমসটেক-২ এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর ৪-এর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। এছাড়া ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য পৃথক লেন এবং ব্যস্ততম স্থানগুলোর ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে পৃথক গ্রেডবিশিষ্ট একটি ইন্টারচেঞ্জ করা; সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের সড়ক গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন; রোড অপারেশন ইউনিট নির্মাণ তথা ওভারলোড নিয়ন্ত্রণের জন্য টাঙ্গাইলের পাকুল্লা, বগুড়ার মহাস্থানগড় এবং রংপুরের ইসলামপুরে তিনটি এক্সল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ ও স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ভুমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ তিনগুণ হারে নির্ধারিত হওয়ায় এবং হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ অন্তর্ভুক্ত করায় ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ১২৭ হেক্টর বাড়ানোসহ ভূমি অধিগ্রহণখাতে মোট ২ হাজার ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা এবং রিসেটেলমন্টে খাতে ২২৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া মূল ডিপিপিতে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের জন্য ধারণাগত ডিজাইন বাবদ ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে ডিটেইল্ড ডিজাইন ও ২০১৯ সালের সওজ অধিদফতরের ডিসডিউল অব রেটস অনুসারে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণে ৪৪৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বাড়ানো হবে।
এদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের সড়ক গবেষণাগার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণে ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং রোড অপারেশন ইউনিট নির্মাণে ১১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় কমানো হবে। এছাড়া সড়ক নির্মাণ কাজের মোট আটটি প্যাকেজের মধ্যে চলমান সাতটি প্যাকেজের অনুমোদিত চুক্তি মূল্য ৪ হাজার ১৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন অবকাঠামোর ডিজাইন সংশোধন ও কনক্রিট পেভমেন্ট অন্তর্ভুক্তির কারণে চলমান সাতটি প্যাকেজের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ খাতে ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।
সিসিজিপি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সড়ক নির্মাণ কাজের অবশিষ্ট প্যাকেজের প্রাক্কলন সওজ অধিদফতরের ২০১৯ সালের সিডিউল অব রেটস অনুসারে হালনাগাদ করায় প্যাকেজমূল্য মূল সংস্থানের চেয়ে ২৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণ প্যাকেজ এবং ইন্টারচেঞ্জ, সড়ক গবেষণাগার ও রোড অপারেশন ইউনিট নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ বাস্তবায়নের জন্য কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন পরামর্শক সেবা খাতে ১ হাজার ৩৩৪ জনমাস এবং এ খাতে ১৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বাড়ানো হবে। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট খাতের সংস্থান ৩২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা বৃদ্ধি এবং প্রকল্পের আওতায় সড়ক নির্মাণ প্যাকেজ এবং ইন্টারচেঞ্জ, সড়ক গবেষণাগার ও রোড অপারেশন ইউনিট নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন; তাই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীস সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত হবে এবং দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এছাড়া সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন করিডোর ৪ও ৯ এশিয়ান হাইওয়ে-২, বিমসটেক-২ এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর-৪-এর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।’