Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এইচএসসি: ফল প্রস্তুতে একাদশ-দ্বাদশের মূল্যায়ন দাবি শিক্ষার্থীদের


১১ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৩

ঢাকা: এসএসসি ও জেএসসির ফলের ভিত্তিতে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই ফল প্রকাশ করা হবে। তবে এইচএসসি ও সমামানের পরীক্ষার ফল তৈরিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নিজস্ব মূল্যায়নের ফলাফলকেও বিবেচনায় আনতে চাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। একই মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদেরাও।

বিজ্ঞাপন

আজিমপুর গার্লসের শিক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা নমো পরীক্ষা না হওয়ায় যেমন খুশী হয়েছেন, তেমনই অখুশী হয়েছেন শুধু এসএসসি ও জেএসসির বিবেচনায় ফল প্রকাশের খবরে। কারণ ওই দুটি পাবলিক পরীক্ষার চেয়ে ভালো ফলাফল তিনি একাদশ-দ্বাদশের সাময়িক পরীক্ষাগুলোতে করেছেন। এছাড়া এই পরীক্ষাগুলোই এইচএসসির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলেও মনে করছেন তিনি।

শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষা যে সিলেবাসে দেব, সেই একই সিলেবাসে আমরা কলেজে সব পরীক্ষা দিয়েছি। তাহলে ওই পরীক্ষার ফলও কেন বিবেচনায় নেওয়া হবে না! এসব পরীক্ষার ফল বিবেচনায় নিলে আসল ফলাফল আরও গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করি।’

একই মত দিয়েছেন শর্মিষ্ঠার সহপাঠী জুঁই, তামান্না ও ঐশী। তারাও এইচএসসির ফল প্রস্তুতে কলেজে দেওয়া পরীক্ষায় ফল বিবেচনায় আনতে বলছেন। এরা ছাড়া ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজ, উদয়ন, আজিমপুর ভিকারুননিসা, রায়হান কলেজ, নবকুমার ইনস্টিটিউট ও লালবাগ সরকারি স্কুল ও কলেজের কমপক্ষে ত্রিশ জন শিক্ষার্থী এই মত জানিয়েছেন।

কেবল ঢাকা কলেজের দুজন শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘তারা শিক্ষার্থী হিসেবে যথেষ্ট ভালো হলেও কলেজের পরীক্ষাগুলো মনোযোগের সঙ্গে দেননি। তাই এসব পরীক্ষায় তাদের ফল বিপর্যয় হয়েছিল। এজন্য এসব পরীক্ষার ফল বিবেচনায় না নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।’

এদিকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ ফওজিয়া খাতুন বলেন, ‘কলেজের পরীক্ষাগুলোর ফল বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। কারণ একই সিলেবাসে এসব পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এক্ষত্রে ফলাফল মূল্যায়নে প্রশ্ন তুলতে পারবে না কেউ, তাছাড়া ফল কেমন হতে পারে সেই বিষয়েও কিছুটা রহস্য রাখা যাবে।’

বিজ্ঞাপন

একই কলেজের অভিভাবক ও আইনজীবী ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘এসএসসিতে জিপিএ-৫ থাকলে এইচএসসিতেও পাবে। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা এইচএসসি পরীক্ষা হলে এই ফলাফল করতে পারবে না। এজন্য কলেজের ভেতরের ফলাফল বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।’

শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এইচএসসি বাতিলের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের একটা অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। ফল প্রকাশের জন্য এসএসসি ও জেএসসি ফল বিবেচনায় নেওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক। এর পাশাপাশি কলেজের মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলও বিবেচনায় নিলে কোনো সমস্যা থাকার কথা না। এটি করা গেলে তাদের মূল্যায়ন যথার্থ হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ তাহমিনা হক এবং একই ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুজিবর রহমানও একাদশ ও দ্বাদশের ভেতরের পরীক্ষাগুলোর ফল বিবেচনায় নিলে ভালো হতে পারে মত দেন।

তারা দুজনেই বলেছেন, এতে করে এইচএসসির এই ফলাফলকে কেউ ‘চ্যালেঞ্জ’ করতে পারবে না।

ইতোমধ্যেই চ্যালেঞ্জর মুখে পড়েছে মন্ত্রণালয় এসএসসি ও জেএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ফল তৈরির পরিকল্পনা। গত ৮ অক্টোবর পরীক্ষার্থী শতাব্দী রায়ের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান এই ফল প্রকাশের সিদ্ধান্তকে আদালতের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং ৯টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা পরীক্ষা নেওয়া গেলে নিজ নিজ কলেজে অনুষ্ঠিত টেস্ট পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রস্তুতেরও দাবি গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হয়। মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের পক্ষ থেকে আজকে এই নোটিশের উত্তর দেওয়ার কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘বিষয়টি যাছাই করে দেখা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ২৩ দিন আগে ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরে পরীক্ষা শুরুর দিন দশেক আগে ঘোষণা দেওয়া হয়, এইচএসসি পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত।

এরপর দেশে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়কাল বাড়তে থাকে। সবশেষ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে বারবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এইচএসসি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা শুরুর পূর্বনির্ধারিত তারিখের ছয় মাস পর এসে শেষ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানালো, এ বছর আর পাবলিক এই পরীক্ষাটি আলোর মুখ দেখবে না। এর ফলে ১৩ লাখ ৭৮৯ জন পরীক্ষার্থীকে আর এইচইসসি, আলিম বা সমমান পরীক্ষার টেবিলে বসতে হচ্ছে না।

এইচএসসি পরীক্ষা ফল প্রকাশ

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর