সংশোধিত আইন ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন কমাবে— আশা করছেন প্রতিমন্ত্রীও
১২ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৫৪
ঢাকা: আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের মতো মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরাও মনে করছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হওয়ায় ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন কমবে। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়ার সময়ও কমে আসবে। আইন সংশোধন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১২ অক্টোবর) মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০’-এর ৯ (১) ধারা সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে মন্ত্রিপরিষদ সভায় খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর) অধ্যাদেশটি জারি হবে। আগামী নভম্বরে সংসদে অধ্যাদেশটি আইন আকারে পাস হবে। সমাজের সবার সহযোগিতায় দেশ থেকে ধর্ষণ প্রতিহত করা সম্ভব হবে। ফলে ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধ হবে।
প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, এই আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন আরও ধাপ এগিয়ে গেল। এসময় আইনমন্ত্রীকেও সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। যারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবিতে রাজপথে ও বিভিন্ন মাধ্যমে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন ও পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে আমাদের এ দেশ ধর্ষণমুক্ত হবে। আমি চাই না একজন নারী বা শিশুও ধর্ষিত হোক। সমাজ থেকে ধর্ষণ নির্মূল করতে পরিবার, সমাজ, বিভিন্ন মিডিয়া ও কমিউনিটির দায়িত্ব রয়েছে।
নতুন এই সংশোধনীত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি— নতুন যে সংশোধনী আনা হয়েছে, সেটি কাজ করবে। বিচারের যে দীর্ঘ প্রক্রিয়াটা, সেটাও কমে আসবে বলে আশা করছি।
রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে ধর্ষণের সম্পর্কের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা বলেন, কেবল আইন ও সরকার দিয়ে সবকিছু কিন্তু করা সম্ভব নয়। সরকারের সঙ্গে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে অবশ্যই হবে। ধর্ষক ধর্ষকই, তার পরিচয় ধর্ষক। তার অন্য কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। এখানে পরিবারেরও দায়িত্ব অনেক রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি— আইনের সঠিক প্রয়োগ, ইতিবাচক মনমানসিকতা ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে সমাজ ধর্ষণমুক্ত হবে। যারা এ অপরাধে জড়িত হবে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বাংলার মানুষ অচিরেই দেখতে পাবে।
ধর্ষণ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই কিন্তু দেশে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার, বিচার ও ডিএনএ টেস্ট হচ্ছে, যা এর আগের কোনো সরকার করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে ধর্ষণের বিচার অতি দ্রুত সময়ে সঠিক বিচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে বলে আমি মনে করি।
এর আগে, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনীর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) উপধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান ছিল। বৈঠকে অনুমোদিত খসড়ায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
খসড়া অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক প্রতিক্রিয়া জানান, আইনে মৃত্যুদণ্ডের সাজা যোগ হওয়ায় ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধ কমবে বলে আশা করছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিশ্চয় বিশ্বাস করি, ধর্ষণের সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড করায় এই অপরাধ কমে আসবে। না হলে সাজা বাড়ানোর প্রশ্নে আসতাম না।’
আইনের সংশোধন ধর্ষণ ধর্ষণ আইন নারী ও শিশু নির্যাতন আইন নারী ও শিশু প্রতিমন্ত্রী