Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদেশে পাঠানোর নামে ২ কোটি টাকা হাতিয়েছে ভিসা গাইড সেন্টার


১৩ অক্টোবর ২০২০ ০০:২৬

ঢাকা: রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স, বিদেশি কোম্পানির ডিমান্ড লেটার, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বলতে কোনো কিছুই নেই। তবুও ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নামে অফিস খুলে বিদেশে ভালো বেতনে কর্মী পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভিসা গাইড সেন্টার। রাজধানীর মিরপুরের এই প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরে হাতিয়ে নিয়েছে দুই কোটি টাকা। চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়েই এমন প্রতারণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (১২ অক্টোবর) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর শাহআলী মার্কেটের ৯ম তলায় প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-৩-এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।

অভিযানে র‍্যাব জানতে পারে শুধু চলতি বছরেই প্রায় আড়াই হাজার লোকের কাছ থেকে কয়েক ধাপে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল পরীক্ষার নামেও জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করেও প্রতারণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে জীবননাশের হুমকিও দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি, ভিসা পরামর্শক ও কাউন্সিলিং এবং প্রতিষ্ঠানটির আইটি স্পেশালিস্টকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান শেষে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘ভিসা গাইড সেন্টার মূলত একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু সেই জায়গা থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরে এসে‌ অনুমোদন না নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ গমনেচ্ছুদের কানাডা, জাপান ও ফিজি, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতো। এরপর সারাদেশে দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুদের যোগাযোগ করতে বলতো।’

ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘২০১৩ সালের অভিবাসী আইন অনুযায়ী তাদের কোনো রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স নেই। যেসব দেশের কোম্পানিগুলোতে লোক পাঠানোর কথা বলছে তাদের ডিমান্ড লেটারও নেই‌। নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। এরপরও তারা অসদুপায়ে বিভিন্ন কোম্পানির নামে অ্যাপয়ন্টমেন্ট লেটার তৈরি করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের হাতে দেয়। আর এভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। আজও কয়েকজনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে তারা।

তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অনেকে ভুয়া ভিসা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে তারা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি, কখনও অস্ত্রের মুখে অথবা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ কর্মকর্তারা।’

পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘অভিযানের এই স্বল্প সময়ে আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি তাতে কেবল চলতি বছরেই আড়াইহাজার লোকের কাছ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এমনকি প্রতিদিনই বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে ৫/৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা।’

তিনি বলেন, ‘চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে বিদেশ গমনেচ্ছুরা প্রতিষ্ঠানটিতে যোগাযোগ করলে তারা প্রথমে বলে, ভিসা করার আগ পর্যন্ত কোনো টাকা লাগবে না। কিন্তু যখন তাদের ভিসা সেন্টারে এসে যোগাযোগ করে, তখন তারা‌ কাউন্সেলিং করার চেষ্টা করেন। এ সময় বিদেশ গমনেচ্ছুদের মোটা অংকের বেতনের প্রলোভন দেখান। এক পর্যায়ে তারা বলে, আপনার ভিসা সাবমিট করা হয়েছে, আপনি আপাতত ২৫০ ডলার দেন। এরপর মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষা বাবদ ১০ হাজার টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।’

অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাফিজ নিজেও স্বীকার করেছেন মেডিকেল ফিটনেস পরীক্ষা বাবদ নেওয়া ১০ হাজার টাকার মধ্যে তিনি মাত্র এক হাজার টাকায় শেওড়াপাড়া‌ একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রক্ত পরীক্ষা করান। এরপর ফাইল সাবমিট হলে দেড়শ থেকে দুইশ ডলার ও মন্ত্রণালয়ের সই বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা নেন। এক সময় অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেখি আরও আড়াইশ থেকে তিনশ ডলার হাতিয়ে নেয় তারা। আবার কখনও কখনও কানাডা বা জাপান দূতাবাসের ক্লিয়ারেন্সের কথা বলে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা পর্যন্ত একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এসব কারণে অভিযান শেষে দায় স্বীকার করায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সি এস হাফিজ এবং এমডি মোশারফ হোসেনকে অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩২ ধারায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সেলিংয়ের সঙ্গে জড়িত আরিফুল ইসলাম ও আইটি স্পেশালিস্ট সুজন রনিকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে।

পলাশ বসু বলেন, ‘অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন। অভিযানের সময়ই তাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেছি। আরও যারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক মাসের মধ্যে তাদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে।’

২ কোটি টাকা টপ নিউজ প্রতারণা ভিসা গাইড সেন্টার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর