Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাকালেও বাংলাদেশে মাসিক টিকাদানে অগ্রগতি, স্বাগত ইউনিসেফের


১৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৩৪

ঢাকা: করোনা মহামারিতে বাবা-মা, কমিউনিটি ও স্বাস্থ্য সেবাগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়ার পরও বাংলাদেশে মাসিক টিকা নেওয়ার হার কোভিড-১৯-এর আগের পর্যায়কে ছাড়িয়ে গেছে। আর এই অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছে ইউনিসেফ।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি ভিরা মেন্ডোনকা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এবং এই কার্যক্রম নিঃসন্দেহে হাজারো শিশুর জীবন বাঁচাবে। এই গতি যাতে বজায় থাকে এবং কোনো শিশু যাতে বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য টিকাদান প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইউনিসেফ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিজ্ঞাপন

এ বছরের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং বাংলাদেশ কার্যকরভাবে লকডাউনের ভেতর দিয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। প্রথম দিকের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ থাকার পরও সরকার এই মূল সেবা অব্যাহত রাখায় ইউনিসেফ গুরুত্বপূর্ণ টিকাগুলো সরবরাহ নিশ্চিত করে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (এমওএইচএফডব্লিউ) স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) মা, নবজাতক, শিশু ও কিশোরী স্বাস্থ্যবিষয়ক পরিচালক ড. মো. শামসুল হক বলেন, ‘লকডাউনে বিধিনিষেধের কারণে অনেক বাবা-মা তাদের শিশুকে টিকা দিতে বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিয়ে ভয়ের মধ্যে ছিলেন। অন্যদিকে টিকাদান সেবা যে অব্যাহত ছিল সেটাই জানতেন না অনেকে। ফলে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে টিকা গ্রহণের হার ব্যাপকমাত্রায় কমে যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবার বাড়তে থাকে।’

বাংলাদেশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে, বছরে ৩৮ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়া। এপ্রিল ও মে মাসে ২ লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি শিশু পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন মিস করেছে, যা মাসিক লক্ষ্যের এবং কোভিডের আগের পর্যায়ের প্রায় অর্ধেক। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অংশীদারদের সহায়তায় টিকাদান কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। টিকার মজুদ এবং টিকাদানের সময়গুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ইউনিসেফ মহামারির কারণে ভীতি ও উদ্বেগ মোকাবিলা করে শিশুদের টিকা দিতে এবং তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে তাদের অভিভাবকদের উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে একটি প্রচারাভিযান চালাতে সহায়তা করেছে।

বিজ্ঞাপন

একই সময়ে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও কোভিড-১৯ চলাকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ টিকাদান এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক নির্দেশিকা তৈরি ও প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করেছে। এছাড়া মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতীয় প্রচেষ্টায় সহায়তা দিতে এ পর্যন্ত ইউনিসেফ ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দ্রুত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি কমিউনিটিতে সচেতনতা বাড়াতে জোরদার কর্মসূচি নেওয়ার কারণে জুন থেকে টিকাদানের হার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে শুরু করে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মওলা বক্‌শ চৌধুরী বলেন, ‘যেসব শিশু টিকা নিতে পারেনি আমরা তাদের নিবিড়ভাবে চিহ্নিত করছি এবং আস্থা বাড়াতে বাবা-মা ও যত্নকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছি। টিকাদানের দিক থেকে জুন ও জুলাই প্রাক-কোভিড পর্যায়কে ছাড়িয়ে গেছে। এবং আমরা মাসিক লক্ষ্যের ১০০ শতাংশেরও বেশি অর্জন করেছি। আমরা শিশুদের জন্য বাড়তি কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে টিকাদানের ধারাবাহিকতায় যে বিচ্ছেদ পড়েছে তা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছি।

টিকাদানে উল্লেখযোগ্য অর্জন থাকার পরও বেশ কিছু উদ্বেগের ক্ষেত্রও রয়েছে। কোভিড ভাইরাস সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু দেশটি বার্ষিক হাম-রুবেলা টিকাদান কার্যক্রম ও তার প্রচারাভিযান স্থগিত রেখেছিল, যা মার্চ ২০২০-এ সংঘটিত হওয়ার কথা ছিল। তখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে বেশকিছু হামের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করে যায়। যদিও সেই প্রাদুর্ভাব দমন করা গেছে। তারপরও জাতীয় হাম-রুবেলা কার্যক্রম চলতি বছরের মধ্যে পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৯ মাস থেকে ৯ বছর বয়সী ৩ কোটি ৪০ লাখ শিশুকে লক্ষ্য করে হতে যাওয়া এই টিকাদান কার্যক্রম বাচ্চাদের মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করবে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি ভিরা মেন্ডোনকা বলেন, ‘জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে আমাদের কাছে যত ধরনের উপায় রয়েছে তার মধ্যে টিকা হচ্ছে অন্যতম সাশ্রয়ী একটি উপায়। বাংলাদেশে শিশুদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতিতে ইউনিসেফ অটল রয়েছে এবং আমরা হাম, রুবেলা কার্যক্রম ফের করার জন্যে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

অগ্রগতি ইউনিসেফ করোনাকাল টিকা স্বাগত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর