‘তৃণমূলে পড়ে থাকা মানুষের সেবা করাটা সব থেকে বড় দায়িত্ব’
১৫ অক্টোবর ২০২০ ১২:৫২
ঢাকা: প্রজাতন্ত্রের উদ্দেশ্যে জাতির পিতার বক্তব্যের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা নবীন কর্মচারী তাদের কিন্তু এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। এই দেশের গরীব মানুষগুলি এখনো যারা সেই তৃণমূলে পড়ে আছে, তারা এদেশের মালিক। আর তাদেরই ঘর থেকে সবাই লেখাপড়া শিখে আজকে উঠে এসেছেন। কাজেই সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের সেবা করাটা হবে সব থেকে বড় দায়িত্ব।‘
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ৭০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসকথা বলেন। গণভবন থেকে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সাতটি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আজকে যারা সনদ নিচ্ছেন তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। কারণ আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে জনগণের সেবা করবেন। কাজেই জনগণের সেবার জন্যই আজকে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন।’
‘করোনাভাইরাস এমন একটা সমস্যা যেটা শুধু সারা বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বটাকেই যেন স্থবির করে দিয়েছে। এর মাঝেও বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, আমরা যদিও ভূখণ্ডের দিক থেকে খুবই ছোট জনসংখ্যার দিক থেকে বড়। আমাদের সমস্যা অনেক বেশি কিন্তু তার মাঝেও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আমাদের প্রশাসন থেকে শুরু কওে অর্থনৈতিক সামাজিক সব ধরনের অবস্থানগুলি যেন অব্যাহত থাকে, আমাদের মানুষ যেন সেবা পায়, মানুষের যেন ভোগান্তি কম হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
‘জাতির পিতা এ দেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এবং আমরা যে বাঙালি জাতি, আমাদের একটা স্বকীয়তা আছে আমরা পারি, এবং এই দেশের দরিদ্র্য ক্ষুধার্ত যে মানুষগুলি যারা সবসময় বঞ্চনার শিকার হয়েছে, তাদেও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই কিন্তু তিনি তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। কাজেই কর্তব্য এখন সকলের। এই দেশটাকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’
দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন থেকে একটা প্রচেষ্টা ছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রের সুফল যেন জনগণ যেন পায়, স্বাধীনতার সুফল যেন প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায় এবং বাংলাদেশ সারাবিশ্বে যেন একটা মর্যাদা পায়। কারণ যখন আমরা বিদেশে রিফিউজি হিসাবে ছিলাম, মানুষের কাছে শুনতাম বা তার পরেও যখন গেছি, বাংলাদেশ শুনলেই মানুষ মনে করত, এটা একটা ঝড় জলোচ্ছ্বাস ঘূর্ণিঝড় দুর্ভিক্ষ এবং দরিদ্র্যের দেশ। যে দেশ শুধু ভিক্ষার ওপর বাঁচে। মানুষের করুণার ওপর বাঁচে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যাকে সাহায্য চাইতে হয়। বাজেট তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।’
‘ছোট বেলা আমি নিজে দেখেছি, আমার বাবা কিভাবে দেশের জন্য কাজ করেন। স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে আমার মাসহ বন্দি ছিলাম। তারপর আমরা বিজয় অর্জন করেছি সেই বিজয়ী জাতি হিসাবে সেই জাতির একজন সদস্য হিসাবে এটা আমাদের খুব পীড়া দিত। সেজন্য একটা লক্ষ্য ছিল যদি সরকার গঠন করতে পারবো, জনগণের সেবা করাটাই হবে সবথেকে বড় লক্ষ্য। বাংলাদেশের সম্মানটা ফিরিয়ে আনা, বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে আমরা চলবো। কারণ এটা আমরা চাইনি কখনো, যেখানেই যাব শুনতে হবে, ওবাংলাদেশ, বাংলাদেশে তো শুধু এই হয়, ঘূর্ণিঝড় হয়, তোমাদের দেশে বন্যা হয়, তোমাদের দেশে খরা হয়, তোমাদের দেশের মানুষ দরিদ্র্য। এমনকি আমার নিজের চোখে দেখা, কখনো কখনো কেউ কোনো কিছু খাবার কিনে রাস্তায় ছড়িয়ে দিত, ছোট্ট শিশুরা ছুটে খেত সেই খাবার খেতে, সেই ছবি তুলত। এবং সেটা আন্তর্জাতিকভাবে সেটা প্রচার করা হত। বাংলাদেশের এই দুরাবস্থা’-বলেন শেখ হাসিনা।
‘যেটা আমাদের জন্য খুব অসম্মানজনক। আমার নিজের খুব কষ্ট লাগত। অনেক সময় অনেক সাংবাদিককে আমি নিজে সরাসরি জিজ্ঞেসও করেছি, তোমরা এ ধরনের কাজ করো কেন? যখন আমি বাংলাদেশে ফিরে এসেছি। তখন থেকে আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল।’
‘আজকে যতটুকু আমরা যা করতে পারছি, সব কিছুর ভিত্তিটা কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করে গেছেন। আমাদের নিজস্ব প্রশাসন হবে, এবং সেই প্রশাসনের কার্যক্রম চলবে এটাও কিন্তু তিনি নিজেই সৃষ্টি করে গেছেন। তার হাতেই গড়া প্রতিটি ক্ষেত্র। কারণ আমি যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেই তখনি আমরা যে কাজগুলি করতে যাই প্রত্যেকক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, সব ক্ষেত্রেই তিনি কোনো কিছু বাদ দিয়ে যাননি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। সবকিছুর ভিত্তিটা তিনি তৈরি করে গেছেন।’
তারি পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা কিন্তু পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সরকারি কর্মচারীগণের উদ্দেশে তার ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কোড করছি। তিনি বলেছিলেন, আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ওই গরীব কৃষক, আপনার মাইনা দেয় গরীব শ্রমিক, আপনার সংসার চলে ওই টাকায়, আমি গাড়িতে চড়ি ওই টাকায়, ওদের সম্মান করে কথা বলেন, ওদের ইজ্জত করে কথা বলেন। ওরাই মালিক। আজকে যারা নবীন কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের কিন্তু এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। এই দেশের গরীব মানুষগুলি এখনো যারা সেই তৃণমূলে পড়ে আছে, তারা এদেশের মালিক। আর তাদেরই ঘর থেকে সবাই লেখাপড়া শিখে আজকে উঠে এসেছেন। কাজেই সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের সেবা করাটা হবে সব থেকে বড় দায়িত্ব।‘