Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশ্বিনেও মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিদের ‘পৌষ মাস’, ক্রেতাদের মুখ ভার


১৬ অক্টোবর ২০২০ ০৮:২২

মুন্সীগঞ্জ: আলু উৎপাদনে দেশের র্শীষস্থানীয় জেলা মুন্সীগঞ্জ। জেলাটিতে প্রতিবছরই আলুর ভালো ফলন হলেও গত কয়েক বছর ধরে দাম পাননি কৃষকরা। ফলে অনেককেই আবাদের খরচের তুলনায় কম দামে, তথা লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় এই সবজি। হঠাৎ করে এ বছর আশ্বিনের এই শেষ ভাগে এসে সে চিত্র বদলে গেছে। আচমকা বাজারে বেড়ে গেছে আলুর দাম। মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিদের মুখে তাই হাসি ফুটেছে। শুধু তাই নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলেও তারা বলছেন, এই দাম পেলেও লোকসান পুষিয়ে নিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, চাষিদের মুখে হাসি ফুটলেও স্থানীয় বাজারে ক্রেতাদের মুখের হাসি উধাও হয়ে গেছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষটিও বাজারে দাম বেশি হওয়ায় অন্য সবজি কিনতে না পারলেও আলুটা ঠিকই কিনে নিয়ে যেতে পারতেন বাজার থেকে। এখন সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। ফলে স্রেফ আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া পরিবারটিকেও ভুগতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জে এবার সাড়ে ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের পরিমাণ ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৭ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়েও এবার আলুর ফলন বেশি হয়েছে। আগের কয়েক বছরও যে ফলন কম হয়েছে, তা নয়। তবে দাম কম পাওয়ায় আগের বছরগুলোকে লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।

এছাড়া উৎপাদনের পরে লাভের আশায় হিমাগারে মজুত করেও বিপাকে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। মণ প্রতি হিমাঘারে মজুত খরচের চেয়ে বাজারে কম দাম থাকার ঘটনাও ঘটেছে। এতে সর্বস্ব হারিয়ে আলু উৎপাদন বিমুখ হয়েছেন অনেক কৃষক। তবে টানা লোকসানের পর এবার আলুর বাজার ভালো। বর্তমানে হিমাঘার থেকে খোলাবাজারে পাইকারি বা খুচরা— সবখানেই গত কয়েকদিন হলো ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। সরকার আলুর দাম নির্ধারণ করার আগে অবশ্য আরও বেশি পাচ্ছিলেন। তবে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা নিয়েও কৃষকরা অখুশি নন। এই দাম পেলেও তারা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় বর্তমানে ৬৫টি সচল হিমাগারের ধারণক্ষমতা  সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হিমাগারগুলোতে এখনো মজুত আছে প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন আলু। আগামী কয়েকদিনে সব আলু বিক্রি করে দিতে পারলে সেটি লাভ বয়ে আনবে— এমনটিই জানিয়েছেন আলু চাষিরা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আলু চাষ করে কেবল লোকসান করেছেন তারা। এর মধ্যে অনেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে গলদঘর্ম হচ্ছেন। এ বছর কিছুটা দাম পাওয়ায় তারা স্বস্তিবোধ করছেন। এভাবে সরকার প্রতিবছর আলুর দাম নির্ধারণ করে দিলে তাদের জন্য সুবিধা হবে।

এদিকে, কৃষকরা কয়েকদিন বাড়তি দামে আলু বিক্রি করতে পারলেও সরকার দাম বেঁধে দেওয়ার পর ওই দামেই বিক্রি করছেন আলু। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। বৃহস্পতিবারও (১৫ অক্টোবর) স্থানীয় বাজারগুলোতে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে তাদের আলু কিনতে হয়েছে। সে কারণেই বেশি দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, অন্যান্য সবজির দাম বেশি হওয়াকে কারণ দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে আলু বিক্রি করছেন। আর জেলা প্রশাসন আহ্বান জানিয়েছে, কেউ যেন কোনোভাবেই নির্ধারিত দামের চেয়ে দেশি দামে আলু বিক্রি না করে।

ক্রেতারা বলছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর কৃষকরা যদি সেই দামে আলু বিক্রি করেন, তাহলে খুচরা বাজারে এর দাম বেশি থাকাটা অযৌক্তিক। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে বসে থাকলে চলবে না, বাড়তি দামে যারা আলু বিক্রি করে মুনাফা লুটছে, বাজারে অভিযান চালিয়ে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক এ বি এম ওয়াহিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, যে পরিমাণ আলু মজুত আছে, তা পর্যাপ্ত। আলুর কোনো সংকট নেই। ফলে দাম বেড়ে যাওয়ারও কারণ নেই। তবে দেশে দুই দফা বন্যার কারণে অন্যান্য সবজির দাম বেড়েছে। এতে আলুর ওপরও প্রভাব পড়েছে। উত্তরবঙ্গে আলু চাষে দেরি হওয়ার কারণে আলুর দাম বেড়েছে। তবে এখন সরকারের নির্ধারিত দামেই সবাইকে আলু বেচাকেনা করতে হবে।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, আমরা বাজার মনিটরিং করছি। কেউ যদি সরকারের নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে আলু বিক্রি করে, তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলু উৎপাদন ভালো ফলন মুন্সীগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর