থাইল্যান্ডে ক্যাসিনো সেলিমের টাকার পাহাড়
১৬ অক্টোবর ২০২০ ২২:০৭
ঢাকা: অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধানের থাইল্যান্ডে সাতটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সাথে অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে সেলিম প্রধান প্রায় ১৩ কোটি টাকা আয় করে তা বিদেশে পাচার করেছেন। এছাড়া থাইল্যান্ডে আরও ২০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেনের তথ্যও পেয়েছে দুদক। ফলে ক্যাসিনো সেলিম থাইল্যান্ডে টাকার পাহাড় গড়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে আরও জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে জন্মগ্রহন করলেও সেলিম প্রধান বেড়ে উঠে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। বড় ভাই জাপানে থাকার সুবাধে ২০ বছর বয়সেই সেলিম প্রধান পাড়ি জমান জাপানে। সেখানে টানা ৯ বছর থাকার পরে ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে সেলিম প্রধানকে জাপান ছাড়তে হয়। এরপর পাড়ি জমান আমেরিকার নিউউয়র্কে। সেখানে ৪ বছর থাকার পরে আবার পাড়ি জমান জাপানে। শুরু করেন আবার ব্যবসা। কিন্তু পারিবারিক সমস্যায় পড়ে আবারও তাকে জাপান ছাড়তে হয়। এবার বসতি গাড়েন থাইল্যান্ডে। তখন রাশিয়ান মেয়েকে বিয়ে করে ব্যবসা ও সংসার শুরু করেন। তবে থাইল্যান্ডে থাকলেও মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসতেন। আর ২০১২ সালের পরেই তার উত্থান শুরু হয়। কোরিয়ান ব্যবসায়িক পার্টনারের সুবাধে ঢাকার গুলশানে শুরু করেন অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা।
অপরদিকে বাংলাদেশে গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় ক্যাসিনো অভিযান। আর সেই অভিযানের সূত্র ধরে গত বছরের গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেল ৩টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩২২ নম্বর ফ্লাইট থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব। আর ঐ ফ্লাইটে করে সেলিম প্রধান ব্যাংককে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিধিবাম র্যাব তাকে আটক করে ফেলে। পরে তাকে নিয়ে গুলশানের অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ। এ ঘটনায় অর্থপাচার ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র্যাব।
এরপর গত বছরের ২৭ অক্টোবর অবৈধ কারবারের মাধ্যমে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আর চলতি বছরের গত ১০ সেপ্টেম্বর সেলিম প্রধানের নামে ২৭ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানায় দুদকের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান।
এদিকে দুদকের মামলার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সেলিম প্রধানের থাইল্যান্ডে টাকার পাহাড়ের তথ্য। মামলার তদন্তকালে দুদক ক্যাসিনো খেলার মাধ্যমে সেলিম প্রধান প্রায় ১৩ কোটি টাকা আয় করেছেন। যা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। যার প্রমান পেয়েছে দুদক। শুধু তাই নয়, সেলিম প্রধানের মালিকাধীন থাইল্যান্ডে প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড এন্টারটেন্ট মেন্টলি, তমা হোম পাতায়া কোং লিমিটেডসহ সাতটি কোম্পানির রেকর্ডপত্র এখন দুদকের হাতে। আর থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংক, দি সায়েম কর্মাসিয়াল ব্যাংকে সেলিম প্রধানের ২০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
অপরদিকে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো গুলশান আনোয়ার ইতোমধ্যে সেলিম প্রধানের অর্ধশত ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছেন এবংতার আয়কর নথিসহ সকল স্থাবর সম্পদ জব্দ করেছেন। একই সাথে থাইল্যান্ডে সেলিম প্রধান ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির রেকর্ডপত্র জব্দের জন্য এমএলএআর করেছে দুদক। আর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে দ্রুতই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান (অনুসন্ধান) বলেন, যে টাকা সে বিদেশে পাঠিয়ে সেটা আমরা এমএলএআর মাধ্যমে যথেষ্ট সহযোগিতা পাবো। একই সঙ্গে দ্রুতই আমরা তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করব। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে এবং তার স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করেছে। একই সঙ্গে তার আর কোনো সম্পত্তি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অনলাইন ক্যাসিনো অর্থ পাচার ক্যাসিনো জুয়া খেলা মানি লন্ডারিং সেলিম প্রধান