দুর্যোগে ৩ হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট, ক্ষতি পোষাতে নানা উদ্যোগ
২০ অক্টোবর ২০২০ ১০:১০
ঢাকা: চলতি বছর বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৩০ লাখ কৃষকের ২ লাখ ৮১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই হিসাবে উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬৪ টন। বছরটিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমন, আমন বীজতলা, বোরো ধান, আউশ ধান, আউশ বীজতলা, সবজি, মরিচ, চীনাবাদাম, মাসকলাই, পান বরজ, কলা বাগান, আখ, আম বাগান ও লিচু বাগানসহ আরও বিভিন্ন ফসল আক্রান্ত হয়। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণসহ বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রোপা আমন মৌসুমের সম্ভাব্য বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত জেলাসমূহে কৃষকের জমিতে কমিউনিটিভিত্তিক রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৩৩ জেলায় ৩৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষকের জন্য ৫২৭ একর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যে ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
চলতি রোপা আমন মৌসুমের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বেডে রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৬০টি বেডে বীজতলার পরিমাণ ১৫ একরের বেশি, আর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪১৭ একর। ১ হাজার ৬০০ কৃষক এতে উপকারভোগী হওয়ার কথা। এতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৯ লাখ টাকা।
এছাড়া বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য ট্রেতে নাবি জাতের আমন ধানের চারা উৎপাদন ও ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়। ৪১ হাজার ৬০০ ট্রেতে বীজ বপন করা হবে। রোপণযোগ্য জমির পরিমাণ ৫২৮ একর। এতে বরাদ্দের পরিমাণ ৫৪ লাখ টাকা।
মাসকলাই উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ সহায়তা বাবদ ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিনামূল্যে শাক সবজির বীজ বিতরণ কর্মসূচিতে ১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের প্রণোদনায় ৯৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পাশপাশি মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু কৃষি উৎসব উপলক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপনের লক্ষ্যে ১৫২ কোটি ৯১ লাখ টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। এতে সারাদেশের ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ কৃষক উপকারভোগী হবেন। এই কর্মসূচিটি এখনও প্রস্তাবনায় রয়েছে।
এদিকে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রোপা আমন মৌসুমে বন্যার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আপদকালীন সময়ের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে নাবি জাতের রোপা আমন ধানের চারা উৎপাদন ও গাইজ্ঞা ধানের বীজ বিতরণের জন্য ৮৮ লাখ ৪২ হাজার ২৫০ টাকার পুনর্বাসন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৮৮ জেলায় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৬ হাজার ২০০।
রোপা আমন মৌসুমে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আপদকালীন সময়ের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে বিভিন্ন জেলায় কমিউনিটি ভিত্তিক রোপা আমন আমন চারা উৎপাদন ও বিতরণের জন্য ২ কোটি ১২ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে ৩২ হাজার ১২১ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এছাড়া মৌসুমটিতে মাসকালাই বাবদ ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক উপকারভোগী হয়েছেন।
রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, পেঁয়াজ, মুগ ও গ্রীষ্মকালীন তিল উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার, সরবরাহ ও নগদ অনুদান সহায়তা দেওয়ার জন্য ৮০ কোটি ৭৩ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকার কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এতে ৫৬ জেলায় ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ জন কৃষক উপকারভোগী হয়েছেন।
২০১৯-২০ বা ২০২০-২১ অর্থবছরে উপশী আউশ ও গ্রীষ্মকালিন পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণের জন্য ২৩ কোটি ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫০ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৯ জন কৃষক উপকারভোগী হয়েছেন।
আউশ (২য় পর্যায়) আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনামূল্যে সার বিতরণের জন্য ৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এর আওতায় উপকৃত হয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৬৫ জন কৃষক। দেশের ৬৪ জেলায় ১১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫৫ জন কৃষক বিভিন্নভাবে উপকারভোগী হয়েছেন। আর ১১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকারও বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি বাবদ ১১ কোটি ৪০ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অর্থ ছাড় ও অগ্রিম উত্তোলনের মঞ্জুরি দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ২০১৯-২০ বা ২০২০-২১ অর্থবছরে উফশী আউশ (বীজ সহায়তা) আবাদ বৃদ্ধির জন্য ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, সবজি পুষ্টি বাগান স্থাপনের লক্ষ্যে ৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষক উপকারভোগী হবেন।