পি কে হালদার দেশে নামলেই গ্রেফতার— হাইকোর্টের নির্দেশ
২১ অক্টোবর ২০২০ ২২:৪২
ঢাকা: ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে অপসারিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেফতার করতে হবে এবং আদালতে সোপর্দ করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজপি), ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২১ অক্টোবর) নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেন, আগামী ২৫ অক্টোবর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে (ইকে৫৮২) দেশে ফেরার কথা রয়েছে পি কে হালদারের। দেশে ফিরলেই তাকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে হবে।
আদালতে আইএলএফএসএল-এর আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
এর আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর আইএলএফএসএল-এর টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা করতে পি কে হালদার নিরাপদে দেশে ফিরতে চান বলে আদালতকে জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছিলেন, পি কে হালদার কবে, কখন, কিভাবে ফিরতে চান— তা আইএলএফএসএল লিখিতভাবে জানালে সে বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আইএলএফএসএল-এর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। তাতে বলা হয়, আগামী ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য টিকিট কেটেছেন পি কে হালদার। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ওই ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা রয়েছে।
আইএলএফএসএল-এর অর্থ আত্মসাতের মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য পি কে হালদারের দেশে থাকা প্রয়োজন জানিয়ে বিচারক বলেন, পি কে হালদার যদি দেশে আসেন, তাহলে এই কোম্পানি ম্যাটারটা নিষ্পত্তি করা যাবে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য এই কোর্ট দেখতে চায় যে তিনি দেশে পা ফেলা মাত্র যেন তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে যেন বাইরে যেতে না দেওয়া হয়। তাহলে তিনি দেশে ফিরলে কিডন্যাপ হতে পারেন বলে যে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন, সেই আশঙ্কা থাকবে না।
পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, আইএলএফএসএল আবেদন করেছিন যেন পি কে হালদার নিরাপদে দেশে ফিরতে পারেন এবং তার সব ব্যবসা-বাণিজ্যও পরিচালনা করতে পারেন। তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখারও আবেদন করেছিল। কিন্তু পলাতক থেকে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া— এটা আমাদের ইতিহাসে কোথাও নেই। আদালতও এই আবেদন গ্রহণ করেননি।
পি কে হালদারকে গ্রেফতারে আদালতের আদেশের কথা জানিয়ে দুদকের এই আইনজীবী বলেন, বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তিনি সোপার্দ হবেন। সেখান থেকে দুদকের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। তিনি বিমান থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আইনের হেফাজতে চলে যাবেন।
পি কে হালদার একসময় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। পরে তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএল-এর এমডি’র দায়িত্ব নেন। গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে এ বছরের শুরুতে অভিযোগ ওঠে। পরে প্রতিষ্ঠানটির এমডি পদ থেকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে।
গত ১৯ জানুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানের ৭ আমানতকারীর করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ ১৩ পরিচালকের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ এবং সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পি কে হালদার এবং তার মা, স্ত্রী, ভাইসহ মোট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ এবং সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া পিকে হালদারসহ এই ২০ জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং তাদের গত পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আইএলএফএসএল-এর দু’জন পরিচালক আপিল বিভাগে আবেদন করলেও আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
আইএলএফএসএল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড গ্রেফতারি পরোয়ানা পি কে হালদার