লাউয়াছড়ায় গাছ চুরি: ‘কর্মকর্তাদের’ জড়িত থাকার অভিযোগ
২৩ অক্টোবর ২০২০ ১৩:২৯
মৌলভীবাজার: করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সব পর্যটনকেন্দ্রের মতো মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানেও ভ্রমণে এতদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল। পর্যটনহীন উদ্যান তদারকিতে ছিল না তেমন গুরুত্ব। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উদ্যানের অসংখ্য গাছ কেটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের একদল কর্মকর্তা গাছ চুরির সঙ্গে যুক্ত। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত গাছ কেটে ফেলা সম্ভব হতো না বলে তাদের অভিযোগ।
লাউয়াছড়া বনের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, সবুজ ঝোপজঙ্গলের মধ্যে পড়ে আছে অসংখ্য গাছের গুড়ি। সেগুন, আগর, বনাক, চাপালিশ, লোহা কাঠ, আকাশমণিসহ বিভিন্ন জাতের মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। শুধু রাতেই নয়, করোনাকালে দিনেও গাছ কাটা হচ্ছে।
লাউয়াছড়ায় গাছ কাটতে এসে প্রতিবেদকের নজরে পড়েন এক ব্যক্তি। আলাপচারিতায় তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। এই প্রতিবেদক তখন প্রকৃতি ও সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেমনকে বিষয়টি জানান। গাছ উদ্ধার করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে প্রতিবেদককে জানালেও পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাছ উদ্ধার তো নয়ই; এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেননি বনবিভাগের সেই কর্মকর্তা।
তবে গাছ চুরির কথা স্বীকার করে লাউয়াছড়ার বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এবং রেঞ্জ অফিসার মোনায়েম হোসেন লোকবল সংকটকে দায়ী করে বলেন, চারজন প্রহরী, একজন মালি ও দুইজন বুটম্যান দিয়ে লাউয়াছড়ার মতো বিশাল বনকে চোরচক্রের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন।
বন বিভাগের তথ্যমতে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সুযোগে ১৭১টি গাছ চুরি হয়েছে। যদিও স্থানীয়দের হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন। চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসে লাউয়াছড়া বনথেকে সবচেয়ে বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাছ চুরির দায়ে ৩৫টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ। তবে একই সময়ে সেগুন, আগর, বনাক, চা পালিশ, আকাশমণিসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৯০০ ঘনফুট চোরাই কাঠ উদ্ধার ও জব্দ করেছে বন বিভাগ। যার বাজারমূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা।
১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে উদ্ভিদ রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির, এর বেশিরভাগই ফলজ ও বনজ।
এ বিষয়ে প্রকৃতি ও সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত চলছে। গাছ পাচারের সঙ্গে আমাদের বনবিভাগের কারও অবহেলা কিংবা সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।