দৃষ্টি ৩ নভেম্বরের দিকে: জমে উঠছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
২৩ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৭
ঢাকা: জমে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শুধু আমেরিকান নয়, বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন ৩ নভেম্বরের দিকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র ১০/১১ দিন বাকি। চলছে ক্ষণগণনা।
এখন মুখোমুখি শীর্ষ দুই দলের দুই প্রার্থী। একজন হলেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যদিও এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প-জো বাইডেনসহ ১২১৬ জন। ফেডারেল ইলেকশন কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ট্রাম্প-বাইডেন ছাড়া অন্য প্রার্থীরা ছোট ছোট দলের প্রার্থী অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদেরকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ তারা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি এবং তার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এবার ট্রাম্পের রানিংমেট অর্থাৎ ভাইস প্রেসিডেন্ট তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আর জো বাইডেনের রানিংমেট ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএস সিনেটর কমলা হারিস। যদিও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট গ্রহণ চলছে এবং আগাম ভোটের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন ৫৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। এর আগে বিদায় নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১২ সালের ৫৭তম নির্বাচনে দেশের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট এবং ২০০৮ সালের ৫৬তম নির্বাচনে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ২৩০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চলছে। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে প্রথম এবং একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। যিনি আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের অন্যতম।
এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী প্রচার-প্রাচারণা ততই বেড়ে চলছে। পাশাপাশি প্রধান দুই প্রার্থীর একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ততই উঠে আসছে। সর্বশেষ বৃস্পতিবারের প্রেসিডেন্টশিয়াল সর্বশেষ বিতর্কের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলেছে নির্বাচনী ঢামাডোল। এবারের নির্বাচনে মহামারি করোনা ছাড়াও বিদেশি হস্তক্ষেপ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, কর্ম সংস্থান, বর্ণ বৈষম্য প্রভৃতি বিষয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ ছাড়াও আলোচনায় রয়েছে অরাজনৈতিক ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা-বার্তা, বাচন-ভঙ্গি, মিডিয়ার খবর-কে ‘ফেক নিউজ’ অ্যাখ্যা এবং গুরুত্ব না দেয়া, তার ট্যাক্স দেয়া-না দেয়া, গণচীনে ব্যাংক একাউন্ট থাকা, ইসরাইলি প্রীতি প্রভৃতি বিষয়। অপরদিকে জো বাইডেন অপেক্ষাকৃত বয়স্ক, তার রানিংমেট নারী, তার অভিবাসন ও স্বাস্থ্য নীতি (ওবামা কেয়ার), কর্মসংস্থান প্রভৃতি বিষয় আলোচনা-সমালোচনায় স্থান করে নিয়েছে।
পর্যবেক্ষকদের অভিমত এবারের প্রেসিডেনট নির্বাচনে ইতিহাসের সকল রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ক্ষেত্রে আমেরিকান সকল সভ্যতা-ভব্যতা তথা রাজনীতিতে ‘আমেরিকান বিউটি’ বিনষ্ট হয়েছে। প্রার্থীর ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রেও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর প্রভাব লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি দানা বেঁধে উঠেছে ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসী’ আর সাদা-কালো’র দাঙ্গা প্রসঙ্গ। ফলে সব মিলিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আমেরিকান জনগণ। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যম আর শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান/সংগঠনগুলোর জরিপ বলছে- জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে এবং এসব জরিপ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেননা, ইতিপূর্বের নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর ও সাবেক ফাস্ট লেডি এবং সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও ইলেকট্রোরাল ভোটে তার প্রেসিডেন্ট পদে হরে যান সেক্ষেত্রে আল গোরের বিরুদ্ধে জর্জ বুশ (জুনিয়র) এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হন।
অপরদিকে এবারের নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি রিপাবলিকান পতাকা উড়ছে জোরেসোরে। এর আগে বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটদের একচেটিয়া প্রভাব দেখা গেলেও এবারই প্রথম রিপাবলিকান বাংলাদেশি সংগঠন গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ডেমোক্র্যাটদের বিভিন্ন সংগঠন পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশি আমেরিকান রিপাবলিকান এলায়েন্স ইউএসএ, বাংলাদেশি-আমেরিকান রিপাবলিকান ককাস প্রভৃতি সংগঠন। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও জোরেসোরে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।