‘সাংবাদিকরা যা খুশি রিপোর্ট করতে পারেন, কোনো বাধা দেইনি’
২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৬:২৬
ঢাকা: সমালোচনায় কোনো আপত্তি নেই, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘সমালোচনার মধ্য দিয়েই অনেক কিছু জানা যায়। আপনারা রিপোর্ট করেন এবং যে যেভাবে—যা খুশি আপনারা কিন্তু রিপোর্ট করতে পারেন। সেখানে আমরা কোনো বাধা দেইনি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতাও কিন্তু আপনাদের সেই সুযোগটা দিয়েছিলেন।’
রোববার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যুক্ত হন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে প্রেসক্লাবে সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় একটা বক্তব্যে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলন, ‘বিপ্লবের পর যেকোনো দেশ কোনো যুগে এতটা স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে নাই, যা আমরা করছি। আমরা ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও বিশ্বাস করি। এই জন্য আপনাদের কোনো কাজে কখনো কোনোরকম হস্তক্ষেপ করি নাই। বিপ্লবের পরে ছয় মাসের মধ্যে আপনারা যতখানি স্বাধীনতা পেয়েছেন ততখানি স্বাধীনতা এদের পূর্বে কেউ পায় নাই। আমার সরকার সংবাদ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে এমন নজির কেউ দিতে পারবে না।’
‘কথাগুলো সত্য। আপনারা জানেন, এখন তো অনেকেই এখন অল্প বয়সের তখন জন্মই হয় নাই। যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে ২৫ মার্চ। তখন কিন্তু অনেকগুলি পত্রিকা তারা পুড়িয়ে দেয়। খুব বেশি পত্রিকা আমাদের ছিল না। প্রত্যেকটা সংবাদপত্র অফিসে তারা হামলা চালায়। স্বাধীনতার পর এমন একটা অবস্থা হয় এই সব সংবাদপত্র চালানো তাদের পক্ষে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে সাংবাদিকদেরকে সরকারি চাকুরি দিয়েছিলেন, সরকারি বেতন সবাই পেতেন সরকারি চাকুরির মর্যাদা দিয়েছিলেন। সেটাকে হয়তো অন্যভাবে দেখা হয়েছে, ওনি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছেন! কারণ তখন কারও বেতন দেবার মতো বা সাংবাদিক চালানোর মতো কোনো ক্ষমতা ছিল না। আর্থিক সেই অবস্থাটা ছিল না। সেই দায়িত্বটাও তিনি নিয়েছিলেন এবং তখন সকলকেই সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন।’
‘দুভার্গ্য হল আমার নিজের দেখা, যারা সরকারি চাকরি পেয়েছিল তারাই বেশি সমালোচনা করত। যে কারণে আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে আসি, তখন দুটি পত্রিকা সরকারি ছিল। আমি সেগুলি যখন বেসরকারি করে দিতে যাই বা সরকারি কোনো পত্রিকা থাকবে না বন্ধ করে দিতে যাই, তখন একসময়কার সমালোচকরা তারা যেহেতু সরকারি বেতন-টেতন পেতেন, তারা আন্দোলনও করে, অনশনও করে। কেন সেটা আমরা বন্ধ করবো। তখন আমার বাবা নাকি রাষ্ট্রীয়করণ করেছে বলে আপনারা আন্দোলন করেছেন, সমালোচনা করেছেন, এখনো করে যান। তার মানে রাষ্ট্রীয়করণ করে কোনো সংবাদপত্র রাখবো না। এটা আমার সিদ্ধান্ত।‘
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কাজেই আমি সবাইকে বলবো—একটা দায়িত্ববোধ নিয়ে চলতে হবে। দায়িত্ববোধটা হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। আর ইতোমধ্যে আমরা আমাদের জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। গণমাধ্যমকর্মীদেরও চাকরি সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলি আইন, যেটা আগে কখনো ছিল না। তাছাড়া সম্প্রচার খাতে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সম্প্রচার আইন প্রণয়নেরও কাজ চলছে। এই কমিশনটা গঠন হওয়ার সাথে সাথে সম্প্রচার আইনও আমরা করে দেব। যাতে করে আমি বলবো, বাস্তবমুখী কাজ হয়। অহেতুক সমালোচনায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে যেন একটা হলুদ সাংবাদিকতা যেন না থাকে। আর অনলাইনেও অন্তত সমাজভিত্তিক, মানবিক কল্যাণ, মানুষের উন্নয়নের দিকে যেন কাজে দৃষ্টি থাকে, সেই ধরনের সাংবাদিকতাই যেন হয়।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই জন্য বললাম, আপনারা রিপোর্ট করেন এবং আপনারা জানেন, আপনারা দেখেছেন; যে যেভাবে যা খুশি আপনারা কিন্তু রিপোর্ট করতে পারেন। সেখানে আমরা কোনো বাধা দেইনি। ঠিক স্বাধীনতার পর জাতির পিতাও কিন্তু আপনাদের সেই সুযোগটা দিয়েছিলেন। তার জীবনটাও কিন্তু সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি যখন কোলকাতায় পড়াশোনা করতেন তখন যে পত্রিকা, একবার একটা পত্রিকা বের করা হয়েছিল সাপ্তাহিক মিল্লাত। তার সঙ্গে উনি জড়িত ছিলেন। সেটা বেশিদিন চলেনি। এরপর ইত্তেহাদ নামে একটি পত্রিকা বের হয়, সে পত্রিকার সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। হাসেম সাহেব মূলত দায়িত্বে ছিলেন সে পত্রিকার। কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাদের পূর্ব বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর পাকিস্তান হওয়ার পর যখন সবাই বাংলাদেশে চলে আসে তখন ইত্তেফাক বের করা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অর্থে। এই ইত্তেফাক পত্রিকাটা, তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া এটার দায়িত্বে ছিলেন। সেখানেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আওয়ামী লীগের জন্য তিনি আর একটি পত্রিকা বের করেছিলেন ‘নতুন দিন’ নামে। সেই পত্রিকার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বাংলার বাণী সপ্তাহিক বের করেন। সেটা মার্শাল ল’ জারির পর গ্রেফতার হন এবং এরপর যখন তিনি মুক্তি পান সেই ১৯৬১ সালের দিকে তখন থেকে সাপ্তাহিক বাংলার বাণী বের করেন। এভাবে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক ছিল। সেদিক থেকে আমি দাবি করতে পারি, আমিও বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের সন্তান হিসেবে সাংবাদিক পরিবারেরই একজন সদস্য। কাজেই সেভাবেই আমি আপনাদের দেখি।’