বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে কাস্টমসের সঙ্গে জালিয়াতি
২৫ অক্টোবর ২০২০ ২০:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে সেই পণ্যের চালান খালাসের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা এই জালিয়াতি শনাক্ত করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে –www.mincom.gov.bd। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি www.mincomgov.com নামে একটি ওয়েবসাইট খুলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া পণ্যছাড়ের অনুমোদন জমা দেয় বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকার চকবাজারের মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ চলতি বছরের শুরুর দিকে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও ৪ হাজার ৫১০ কেজি জলপাই আমদানির ঘোষণায় একটি চালান নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজ চালানটি খালাসের জন্য ২৩ এপ্রিল কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু গোপন সংবাদে সন্দেহজনক পণ্যের উপস্থিতির তথ্য থাকায় কাস্টমসের এআরআই শাখা চালানটির খালাস স্থগিত করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। এতে দেখা যায়, ওই চালানে আনা হয়েছে উচ্চশুল্কের ২১ হাজার ৬০ কেজি শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ।
ঘোষণা বর্হিভূত পণ্য আনায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারককে ৬৬ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ও ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা দেওয়া আদেশ দেয়। আমদানি পণ্যের চালানটি খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা আমদানি রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দফতরের ক্লিয়ারেন্স পারমিট কাস্টমসে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ১১ অক্টোবর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিয়াম এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ক্লিয়ারেন্স পারমিট কাস্টমসে দাখিল করে। ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিও দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিএসটিআই-এর ছাড়পত্র এবং কাস্টমসের আরোপিত জরিমানা ও শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে চালানটি ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নূর-এ হাসনা সানজিদা অনসূয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্লিয়ারেন্স পারমিট ও চিঠি নিয়ে আমাদের শুরুতেই সন্দেহ হয়। তখন আমরা ক্লিয়ারেন্স পারমিটে যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি যাচাইবাছাই করি দেখা গেছে সেটি ভুয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে উপসচিবের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা উনার সঙ্গে কথা বলি। এতে আমরা নিশ্চিত হই, ক্লিয়ারেন্স পারমিট ও চিঠি উভয়ই ভুয়া।’
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকারক বরাবর জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে-ঘোষণাবহির্ভূত আমদানিকৃত পণ্যটি শিশুখাদ্য ও বিএসটিআই’র আওতায় শর্তযুক্তভাবে আমদানিযোগ্য হওয়ায় বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ প্রতিপালিত হয়নি বিধায় সিয়াম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ক্লিয়ারেন্স পারমিট ইস্যু করার কোনো সুযোগ নেই।
কাস্টমস কর্মকর্তা সানজিদা অনসূয়া বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে কাস্টমসের সঙ্গে প্রতারণা করায় সিয়াম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।’