শুভ বিজয়া দশমী – ঢাকের কাঠির বিদায়ের সুরে দেবী বিসর্জন আজ
২৬ অক্টোবর ২০২০ ০৯:৫৬
ঢাকা: আজ শুভ বিজয়া দশমী। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সোমবার (২৬ অক্টোবর) শেষ হচ্ছে বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব – দুর্গাপূজা। দেবী এবার এসেছেন দোলায় চড়ে, যাবেন গজে চড়ে। মণ্ডপে মণ্ডপে তাই আজ বিদায়ের সুর, বিসর্জনের ব্যথা।
নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। জনসমাগমের কারণে স্বাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) দশমীর দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা-নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হবে। দশমী থাকবে আগের দিন সকাল ১১টা ১২ মিনিট থেকে পরের দিন কাল সকাল ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত। দর্পণ বিসর্জনের পর বিকালে দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন দেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরবেন।
বিজয়া দশমীর দিন সংক্ষিপ্ত পূজার পর দর্পণ বিসর্জন হয়। কোন কোন জায়গায় দেবীর অপরাজিতা পূজাও হয়। এই দিনেই রাবণ বধের জন্য দশেরা উৎসবও পালিত হয়। এই দিনটিতে অসুর নিধনের পর অসুরের রক্ত দিয়ে দেবতারা বিজয় উৎসব পালন করে ছিলেন ।
পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত যুদ্ধের পর দশম দিনে জয়ী হন দেবী দুর্গা। এজন্যই বিজয়া। সেই লোকাচার বাংলার ঘরে ঘরে সিঁদুর খেলা হিসেবে পরিণত হয়েছে। সিঁদুর খেলার পাশাপাশি চলে কোলাকুলিও। তবে করোনা মহামারির কারনে এবার কোলাকুলি হবে না।
একই ভাবে এবার দুর্গাপূজায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন হবে না। বিসর্জনের জন্য একটি ট্রাকে একসঙ্গে অনেক মানুষ গেলেও এবার একটি ট্রাকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ১০ জন যেতে পারবেন। এর বাইরে অতিরিক্ত যাওয়া যাবে না বলে এর আগে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ‘আগামীকাল বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ডপ বা মন্দির কর্তৃপক্ষ স্বউদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা নেবেন।’
এর আগে ২২ অক্টোবর চন্ডীপাঠ, বোধন এবং দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। যদিও বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ এড়াতে এবছর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করা হয়।
এর আগে বেশ কিছু বিধি নিষেধও প্রদান করা হয়। মন্ডপে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সীমিত করা ও সন্ধ্যায় আরতির পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় পূজামন্ডপ । ছিল না সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধুনুচি নাচের প্রতিযোগিতা। বেশির ভাগ ভক্তরা এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে সোমবার (২৬ অক্টোবর) সরকারি ছুটির দিন। পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী প্রদান করেছেন। বিজয়া উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে এবার সরাসরি টেলিভিশনে এবং ফেসবুকে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থার কথা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভক্তদের বাসায় বসেও অঞ্জলি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহবানে সাড়া দিয়ে এবার অনেক ভক্তই বাসায় বসে প্রতিদিন পুজার অঞ্জলি গ্রহন করেন।
বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বিজয়া দশমী উপলক্ষে দেশের সকল মানুষকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।