‘রায়হানের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছি’
২৭ অক্টোবর ২০২০ ২৩:৫৮
সিলেট: সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়ে রায়হান হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদের গ্রেফতার করার ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়েই সিলেটে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ। এ ক্ষেত্রে অপরাধীদের ধরতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে পুলিশ হেফাজতে নিহত রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার পর পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
নিশারুল আরিফ বলেন, রায়হান হত্যাকাণ্ড অনভিপ্রেত, অপ্রত্যাশিত। যে অপরাধী, যে বাহিনীরই হোক না কেন, সে অপরাধী। যেহেতু পুলিশ এ ঘটনায় অভিযুক্ত, এ কারণে আমি লজ্জিত। তবে এটি আমাদের কাজে কোনো বাধা তৈরি করবে না। কারণ আমাদের টার্গেট মূল আসামিদের গ্রেফতার করা, সে যেই হোক না কেন।
এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিমানযোগে নতুন কর্মস্থল সিলেটে পৌঁছান নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ। কর্মস্থলে যোগ দিয়েই তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হানের বাড়িতে যান। সেখানে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ। তিনি জানান, রায়হানের পরিবারের দাবি রায়হান হত্যা মামলায় মূল আসামিদের গ্রেফতার।
মূল আসামিদের ধরতে সরকারের পক্ষ থেকেও নির্দেশনা আছে জানিয়ে নিশারুল আরিফ বলেন, রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের দাবি, মূল আসামিকে গ্রেফতার করা হোক। পুলিশসহ সবগুলো বাহিনীই এ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশনা রয়েছে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাব। এই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই আমি সিলেটে এসেছি। এখন আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই। সবার সহযোগিতা পেলে আশা করি খুব শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
গত ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে প্রাণ যায় রায়হানের। এ ঘটনায় ১১ অক্টোবর সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে বন্দরবাজার ফাঁড়িতেই পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে উঠে আসে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নির্যাতনে সরাসরি অংশ নেওয়ার জন্য বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া, টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর রায়হানকে ধরে ফাঁড়িতে আনার জন্য বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয় এএসআই আশেক এলাহী, কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজীব হোসেনকে।
গত ২০ অক্টোবর দুপুরে এসএমপি রিজার্ভ অফিস থেকে কনস্টেবল টিটুকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন ২১ অক্টোবর পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির নবনিযুক্ত ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান উদ্দিনকেও সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ।
এদিকে, হেফাজতে মৃত্যু আইন অনুযায়ী মামলা হলে নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের উপস্থিতিতে করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি ছাড়াই ময়নাতদন্ত করে রায়হানকে কবর দেওয়া হয়েছিল। পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ অক্টোবর দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে রায়হানের মরদেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্ত করা হয়।
আসামি গ্রেফতার টপ নিউজ নিশারুল আরিফ পুলিশ কমিশনার পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু পুলিশি নির্যাতন রায়হান হত্যা সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ