প্রাথমিকের বদলি বন্ধের খবরে হতাশ শিক্ষকরা
২৮ অক্টোবর ২০২০ ১০:০৩
ঢাকা: করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারি দফতরগুলো ছুটিতে চলে যাওয়ায় একবছর আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম। পুনরায় অফিস আদালত চালু হওয়ার পর বদলি নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন শিক্ষকরা। তবে সে আশায় গুড়ে-বালি দিয়ে শিক্ষকদের বদলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যাতে হতাশ প্রাথমিকের শিক্ষকরা।
প্রাথমিকের এক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, তিনি থাকেন পুরনো ঢাকায়, আর কর্মস্থল নতুন ঢাকায়। স্কুল পর্যন্ত যেতেই তাকে প্রতিমাসে গুনতে হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। এর মধ্যে আবার লকডাউনের সময় তিনি গর্ভধারণ করেছেন। তাই বদলিটা তার জন্য ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি সন্তান সম্ভবা। এখন যদি স্কুল খুলে দেওয়া হয় তাহলে আমার বিপদ বাড়বে। তাই এই সময়ে বদলি কার্যক্রম চালু থাকলে আমার জন্য সুবিধা হতো। আমার মতো আরও যারা যারা আছেন তাদেরও সুবিধা হতো। এই সময়ে বদলি বন্ধ করে দেওয়াটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরের একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের হাওর অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয় আমাকে। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। শরীরে আগের মতো জোর নেই। যদি নিজের গ্রামে বা পাশের গ্রামের স্কুলে বদলি হওয়া যেত, তাহলে আমি হয়তো আরও ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে পারতাম। এই দফায় বদলি হবে এমন একটা আশা ছিল। কিন্তু বদলি নাকি বন্ধ রাখা হয়েছে। কি একটা হয়রানি!’
এই দুই শিক্ষকের মতো সারাদেশের অন্তত এক ডজন শিক্ষক বদলি বন্ধের খবরের নিজেদের হতাশা প্রকাশ করেছেন সারাবাংলার কাছে।
এর আগে গেল রোববার (২৫ অক্টোবর) বদলি বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিভাগীয় উপ-পরিচালকদের চিঠি পাঠায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। তবে সরকারি কলেজ ও মাধ্যমিকের শিক্ষক এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলি অব্যাহত রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খালেদ আহম্মেদের সই করা ওই আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষকদের সকল প্রকার বদলি কার্যক্রম বন্ধ রাখা সমীচীন হবে।
উল্লেখ্য, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০১টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। গেল দুই বছর ধরেও বন্ধ ছিল এসব শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম। বর্তমানে শিক্ষক বদলি অনলাইন মাধ্যমে করার প্রস্তুতি চলছে। সফটওয়্যার তৈরি করা গেলে, আগামী বছর থেকে শিক্ষক বদলি আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
ম্যানুয়ালি শিক্ষকদের বদলি আবার কবে চালু হবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী মার্চ মাসে বদলি শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফরও বলছে, মার্চে শুরু হতে পারে বদলি।