Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সর্বোচ্চ ভোট না পেয়েও কীভাবে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট?


২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৫:০৫

৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০ এ কেবল জনগণের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন না। এখানে ভূমিকা রাখবে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট। এই দুই ধরনের ভোটের ভিত্তিতেই প্রার্থীদের জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে।

ইলেক্টোরাল কলেজ কী?

আমেরিকানরা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন তারা মূলত ভোট দেবেন এক দল কর্মকর্তাকে যারা ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এখানে কলেজ বলতে নির্বাচকদের একটি গ্রুপের কথা বুঝানো হয়েছে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করবেন।

নিজেদের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে প্রতি চার বছর পর পর মিলিত হয় ইলেক্টোরাল কলেজ। সাধারণত নির্বাচন শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ইলেক্টোরাল কলেজ কিভাবে কাজ করে?

অঙ্গরাজ্যগুলোর জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট সংখ্যা নির্ধারিত হয়। অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতার সংখ্যা এবং ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট সংখ্যা একই হয়ে থাকে।

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট সংখ্যা সবচেয়ে বেশি – ৫৫টি। আবার, ওয়োমিং-আলাস্কা-নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট সংখ্যা ৩। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ৫৩৮ টি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে হলে অন্তত ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে।

অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য থেকে সর্বোচ্চ জনগণের ভোট পাওয়া প্রার্থীই ওই অঙ্গরাজ্যগুলোর ইলেক্টোরাল কলেজের সব ভোট পেয়ে থাকেন।

যেমনঃ টেক্সাস অঙ্গরাজ্য থেকে যে প্রার্থী ৫০.১ শতাংশ জনগণের ভোট পাবেন, তার পক্ষেই ইলেক্টোরাল কলেজের ৩৮ ভোট পড়বে। আবার বিজয়ী প্রার্থী যদি ৯০ শতাংশ ভোটও পান তাহলেও ওই একই ৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটই পাবেন।

বিজ্ঞাপন

তবে, মাইনে এবং নেবরাস্কা অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অর্জিত ভোটের সমানুপাতে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট বন্টিত হয়।

জনগণের সর্বোচ্চ ভোট না পেয়ে কীভাবে প্রেসিডেন্ট হন?

যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ পাঁচ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুইটিতে সর্বোচ্চ জনগণের ভোট না পেয়েও প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। জনগণের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী যদি মোট ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে ব্যর্থ হন তবে এ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

২০১৬ সালের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প, হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে অন্তত ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন। কিন্তু, হিলারি ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট না পাওয়ায় তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেননি।

২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ২৭১ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অর্জন করার পর পাঁচ লাখ ভোটে এগিয়ে থেকেও আল গোর নির্বাচিত হতে পারেননি।

এছাড়া আরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনগণের সর্বোচ্চ ভোট না পেয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারা হলেন – জন কুইন্সি অ্যাডামস, রাদারফোর্ড বি হায়েস এবং বেনজামিন হ্যারিসন।

কেনো এই ব্যবস্থা?

১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান প্রণয়নের সময় শুধুমাত্র জনগণের ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল অসম্ভব। এর কারণ দেশটির আয়তন এবং যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতা। আবার, কেবলমাত্র নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ব্যাপারে সংবিধান প্রণেতারা একমত হতে পারেননি। তাই সেসময় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ব্যবস্থার প্রণয়ন করা হয়।

এ ব্যবস্থার কারণে আকারে ক্ষুদ্র অঙ্গরাজ্যগুলোও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও, দাস অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর পক্ষ থেকেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ব্যবস্থাকে স্বাগত জানানো হয়। যেহেতু, অঙ্গরাজ্যগুলোর জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নির্ধারিত হয় তাই দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় নির্ধারক হয়ে ওঠে।

অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রার্থীর বিপক্ষে কি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট দেওয়া যায়?

অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত প্রার্থীকেই সাধারণত ওই অঙ্গরাজ্যের সকল ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট প্রদাণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু, বিশ্বাসহীনতার অভিযোগ এনে ইলেক্টোরাল কলেজের কোনো সদস্য চাইলে তার বিপক্ষেও ভোট দিতে পারেন।

২০১৬ সালের সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও সাতটি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট বিশ্বাসহীনতার অভিযোগে নির্বাচিত প্রার্থীর বিপক্ষে পড়েছিল। যদিও, তাতে ফলাফল প্রভাবিত হয়নি।

যদি কোনো প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে?

যদি কোনো প্রার্থী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং নিম্নকক্ষ পার্লামেন্টের সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। ইতিহাসে একবারই ১৮২৪ সালে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। সে সময় চার প্রার্থীর মধ্যে কেউই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় আইনপ্রণেতাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল।

কিন্তু, দ্বি-দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রায় অসম্ভব।

ইলেক্টোরাল কলেজ ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-২০২০

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর