ঈদে মিলাদুন্নবী আজ, মহানবীর (সা.) শিক্ষা অনুসরণের আহ্বান
৩০ অক্টোবর ২০২০ ০৮:৫৭ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৩:১৫
আজ শুক্রবার, হিজরি বর্ষপঞ্জির ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস।
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সৌদি আরবে কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কৈশোর থেকেই নিজেকে সততা আর মানবপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই মহামানব ৪০ বছর বয়সে নব্যুয়তপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এরপর থেকেই ছড়িয়ে দিতে থাকেন ইসলামের শিক্ষা।
শান্তির ধর্ম প্রচারে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেও বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল মহানবীকে (সা.)। জন্মস্থান মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যেতে হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত মক্কা-মদিনাকে একত্রিত করে শাসন করেছেন ইসলামের বিধানে। ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনেই মাত্র ৬৩ বছর বয়সে ওফাত বরণ করেন ‘হাবিবে আল্লাহ’ প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)।
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বাদ মাগরিব থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ঘিরে বিভিন্ন আয়োজন পালন করে আসছেন। মসজিদে-মসজিদে এবং নিজ-নিজ বাসায় কোরআন খতম ও জিকির আজগারের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন ও তার প্রিয় হাবিবের বিশেষ রহমত কামনা চলছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ’কে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে মহানবীর (সা.) শিক্ষাকে ধারণ করে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ব্যবস্থা নিয়েছে। এছাড়াও দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলাসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনীর ওপর পক্ষকালব্যাপী আলোচনা সভা ও মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাত থেকেই শুরু হয়েছে।
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সরকারি ছুটি রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি ভবন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই আলোক-সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে শুরু হয়েছে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। বৃহস্পতিবার বাদ জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
মহানবীর (সা.) শিক্ষা সমগ্র মানব জাতির জন্য অনুসরণীয়: রাষ্ট্রপতি
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা সমগ্র মানব জাতির জন্য অনুসরণীয়। মহান আল্লাহ তা’আলা তাকে ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে তার আগমনেই ঘটেছিল ‘সিরাজুম মুনিরা’, তথা আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, তৎকালীন আরব সমাজের অন্যায়, অবিচার, অসত্য ও অন্ধকারের বিপরীতে তিনি মানুষকে আলোর পথ দেখান এবং প্রতিষ্ঠা করেন সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। আল্লাহর প্রতি অতুলনীয় আনুগত্য, অগাধ প্রেম ও ভালোবাসা, অনুপম চারিত্রিক গুণাবলী, অপরিমেয় দয়া ও মহৎ গুণের জন্য তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত। এ জন্য পবিত্র কুরআনে তার জীবনকে বলা হয়েছে ‘উসওয়াতুন হাসানাহ্’, অর্থাৎ সুন্দরতম আদর্শ।
আবদুল হামিদ বলেন, তিনি সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নারীর মর্যাদা ও অধিকার, শ্রমের মর্যাদা, মনিবের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার বিদায় হজের ভাষণ মানবজাতির জন্য চিরকালীন দিশারি হয়ে থাকবে। বিশ্বের ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদীনা সনদ’ ছিল মহানবী (সা.)-এর বিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার প্রকৃষ্ট দলিল। এ দলিলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সার্বজনীন ঘোষণা রয়েছে। ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে তার শিক্ষা সমগ্র মানব জাতির জন্য অনুসরণীয়।
মহানবীর আদর্শ অনুসরণেই মুসলমানদের কল্যাণ নিহিত: প্রধানমন্ত্রী
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত ১২ রবিউল আউয়াল উপলক্ষ্যে আমি বিশ্বের মুসলিম উম্মাহ্ ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাপাচার, অত্যাচার, মিথ্যা, কুসংস্কার ও সংঘাতে জর্জরিত পৃথিবীতে তিনি মানবতার মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়ে সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন। তিনি বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন এবং মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মহানবী (সা.)-এর সুমহান আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে। করোনা মহামারিসহ আজকের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে প্রিয় নবী (সা.)-এর অনুপম শিক্ষার অনুসরণ ও ইবাদতের মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি,ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।
তওহীদের মহান বাণী নিয়ে এসেছিলেন মহানবী: বিরোধী দলীয় নেতা
এদিকে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশ্ববাসীসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
এক শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন তওহীদের মহান বাণী নিয়ে। সারা আরব বিশ্ব যখন পৌত্তলিকতায় বিশ্বাস করত, তখন মহান আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় হাবিব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে রহমতস্বরূপ বিশ্বজগতে পাঠিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খলা ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)। তিনি নিজ যোগ্যতা, মহানুভবতা, সহনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে যে জীবনাদর্শ রেখে গেছেন, তা অনুসরণ করে মুসলিম উম্মাহর প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা।