সারোয়ারের মামলা, সংবাদ প্রকাশের জেরে অপহরণের অভিযোগ
৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:০৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সংবাদ প্রকাশের জেরে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার। অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার চার দিনের মাথায় তিনি এই মামলা দায়ের করলেন।
বুধবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) নেতাদের নিয়ে কোতোয়ালি থানায় যান এবং মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে তুলে নেওয়ার বর্ণনা দিয়ে গোলাম সারোয়ার অভিযোগ করেছেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার কাছে একটি ব্যাগে একটি ডেবিট কার্ড, একটি পেনড্রাইভ, মোবাইল ও নগর এক লাখ টাকা ছিল। জিম্মি অবস্থায় থাকার সময় অপহরণকারীরা তার মোবাইল থেকে সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকী ও কামরুল হুদা এবং তার স্ত্রী জেসমিন সরওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার স্ত্রীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং একটি বিকাশ নম্বর দেয় মুক্তিপণ পাঠানোর জন্য। চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তাকে ফেলে যাওয়ার সময় তারা ওই ব্যাগ ও ব্যাগে থাকা মালামাল এবং পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়।
সারোয়ারের ধারণা, অজ্ঞাতনামা ৬ জন পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশের জেরে তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে এবং নির্যাতন করেছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার অজ্ঞাতনামা ছয় জনের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
গোলাম সারোয়ার সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় তার বাড়ি। নগরীর ব্যাটারি গলিতে ভাড়া বাসায় তিনি একা থাকেন। স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। গোলাম সারোয়ার চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সদস্য। তিনি ‘সিটিনিউজবিডি’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালেও কাজ করেন।
গত ২৯ অক্টোবর রাতে আজকের সূর্যোদয় পত্রিকার ব্যুরো প্রধান জুবায়ের সিদ্দিকী নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি গোলাম সারোয়ার।
এরপর ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বড় কুমিরা গরুর বাজার এলাকায় একটি খালপাড়ে তাকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বুধবার (৪ নভেম্বর) তিনি থানায় মামলা করতে যান।
জিডিতে ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজের কথা বলা হলেও গোলাম সারোয়ার মামলার এজাহারে জানিয়েছেন, একদিন আগে ২৮ অক্টোবর রাতেই নগরীর ব্যাটারি গলির মুখ থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
মুক্ত হওয়ার পর সারোয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জিম্মি অবস্থায় ‘আর নিউজ করবি কি না বল’ এমন কথা বলে তাকে পেটানো হতো। তার ধারণা, নির্যাতনকারীরা ‘পেশাদার কেউ’। তবে তাকে প্রাণে মেরে ফেলা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না, তাকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সব সাংবাদিককে ‘ম্যাসেজ’ দেওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন-
নিখোঁজ সাংবাদিক সারোয়ারকে পাওয়া গেছে
‘নির্যাতনে পেশাদার কেউ, উদ্দেশ্য সাংবাদিকদের থ্রেট দেওয়া’