দ্বিধাবিভক্ত গণফোরাম এক হচ্ছে, জানুয়ারিতে সম্মেলন
৪ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৮
ঢাকা: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এক হচ্ছে দ্বিধাবিভক্ত গণফোরাম। আগামী ১৫ কিংবা ১৬ জানুয়ারি দুই গ্রুপ এক হয়ে দলটির সম্মেলন করবে। সম্মেলনে ড. কামাল হোসেনকে গণফোরামের শীর্ষ নেতার পদে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আর দলটির সভাপতি হতে পারেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। গণফোরামের দায়িত্বশীল সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, ড. কামাল হোসেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া এ সিদ্ধান্ত মানছেন না। ফলে ওই গ্রুপে সৃষ্টি হয়েছে তিনটি উপ-গ্রুপ। এর মধ্যে দুটি উপ-গ্রুপ মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তারা গণফেরামে বিভক্তি চান না, চান ঐক্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারির আগে ড. রেজা কিবরিয়া তার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলটির প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভেঙ্গে দুই ভাগ হয়ে যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। এর এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ তিন নেতা। তারা আগামী ২৬ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলেরও ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ছাড়া ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ আটজনকে বহিষ্কার করেন রেজা কিবরিয়া। বহিষ্কার হওয়া বাকি সাতজন হলেন- অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, হেলালউদ্দিন, লতিফুল বারী হামিম, খান সিদ্দিকুর রহমান ও আব্দুল হাসিব চৌধুরী। আগামী ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় এই অংশের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, রেজা কিবরিয়া অংশের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর পরই মোস্তফা মহাসিন মন্টু গ্রুপ থেকে ড. কামাল হোসেনকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে ড. কামাল হোসেন রাজনীতি থেকে অবসর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার অবসরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ড. কামাল হোসেন তার বন্ধু দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবাহানসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার বিষয়য়ে আলোচনা করেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও। পরিবারের সদস্যরা ড. কামালকে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এখন পর্যন্ত তিনি এ ব্যাপারে অনড় রয়েছেন। রাজনীতি থেকে অবসের যাওয়ার আগে তার গড়া রাজনৈতিক দল গণফোরামকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান বলে জানা গেছে। আর ড. কামালের সেই ঘোষণাটি জানুয়ারির সম্মেলনে আসতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্র আভাস দিয়েছে।
গণফোরামের একধিক নেতা জানান, গত ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরাম আনুষ্ঠনিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর উভয়গ্রুপের ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলটিতে ঐক্যে ফিরিয়ে আনার জন্য ড. কামাল হোসেন এবং মন্টু গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। গত ১০/১২ দিন আগে মন্টু গ্রুপের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন বৈঠক করে গণফোরাম ও রাজনীতি থেকে স্ব-সম্মানে বিদায় নেওয়ার বিষয়টি জানান। জবাবে মোস্তফা মহাসিন মন্টু বলেন, ‘রাজনীতি থেকে আপনি একা অবসরে যাবেন কেন? আমরাও যাব। সবাইর বয়স হয়েছে। তবে দলটিতে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিসেম্বরে কাউন্সিল ডাকা হয়েছে। ওই কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তখন ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিল পৃথকভাবে কেন হবে? সময় নিয়ে জানুয়ারি মাসে কাউন্সিল করা হউক। ওই অধিবেশনে আমিও উপস্থিত থাকব।’ ড. কামাল হোসেনের এই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত সবাই একমত হয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বোঝা যাচ্ছে, জানুয়ারিতে গণফোরামের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ সব বিষয় নিয়ে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যের বিষয় নিয়ে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে তিনি আমাদের জানিয়েছেন, ড. রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে তিনি কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেবেন না। তিনি কোনো গ্রুপে নেই। দলের মধ্যে বহিষ্কার এবং পাল্টা-বহিষ্কারের ঘটনা যা ঘটেছে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এ সময় আমরা তাকে ডিসেম্বরে কাউন্সিল করার বিষয়টি জানালে জবাবে তিনি জানুয়ারির ১৫ কিংবা ১৬ তারিখ সম্মেলনের কথা বলেছেন।’
সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দ্বিধাবিভক্ত গণফোরামের ঐক্য চাই। তবে এখনও আমরা ড. কামাল হোসেনের কর্মকাণ্ড অবজার্ভ করছি। কারণ, তার কথা ও কাজে কোনো মিল নেই।’
অপরদিকে অবিভক্ত দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম জানান, ‘কামাল স্যারের গ্রুপ গণফেরামে তিনটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অনেক নেতাকর্মী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। ড. রেজা কিবরিয়াদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই।’ রেজা কিবরিয়া, শফিউল্লা, মোস্তাকরা যদি ঐকের পক্ষে না থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানান হামিম।