ডোনাল্ডের মসনদে বাইডেনের আঘাত
৭ নভেম্বর ২০২০ ০৯:১৬
ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তির অধিকারী দেশগুলোর একটি। অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি কিংবা অস্ত্র ব্যবসা সবকিছুতেই একচ্ছত্রবাদী অবস্থান দেশটির। এমনও কথা কেউ কেউ বিশ্বাস করেন বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেননা দেশটির আয়ের সিংহভাগ আসে উচ্চ প্রযুক্তি, অস্ত্র রফতানি থেকে। দেশটির মাথাপিছু আয় ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ১৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে দেশটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত পঞ্চাশটি রাজ্য ও একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা নিয়ে গঠিত এক যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এমন একটি রাষ্ট্র নিয়েই গত চার বছর ছিল রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তবে অবস্থা বলছে, মসনদ খোয়াতে বসেছেন ট্রাম্প। সেখানে নতুন অধিপতি হিসেবে বসতে যাচ্ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টি জো বাইডেন।
ভোট গণনার তথ্য বলছে, ইতিমধ্যে ২৬৪ ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করা বাইডেনের চূড়ান্ত জয় এখন কেবল সময়ের ব্যবধান মাত্র। এর মধ্যদিয়ে ম্লান হয়ে যাচ্ছে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবারও মনে হচ্ছিল আলাস্কা, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনায় এগিয়ে থাকা ট্রাম্প কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। তবে শুক্রবার জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়ায় বাইডেনের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের কাছে বিপাকেই আছেন ট্রাম্প। এদিকে বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা তার নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
বার্তা সংস্থা এপির সর্বশেষ হিসাবে ওয়াশিংটন ডিসিসহ ৪৬ অঙ্গরাজ্যের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে দেশজুড়ে বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজারের বেশি ভোট। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজারের বেশি। আর ইলেকটোরাল কলেজেও বাইডেন ২৬৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন ২১৪ ভোট পাওয়া ট্রাম্প থেকে। জনপ্রিয় ভোটে বাইডেন অনেক এগিয়ে থাকলেও প্রেসিডেন্ট হতে হলে ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে তার দরকার হবে কমপক্ষে ২৭০ ভোট। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবস্থা ছিল ফল বাকি থাকা চার অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে জয় পেলে হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হবে না ট্রাম্পকে। কিন্তু নর্থ ক্যারোলাইনা ছাড়া বাকি তিন রাজ্যেই এখন এগিয়ে বাইডেন। সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলোতে বাইডেন জয় পেলে তার ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০৬-এ।
জো বাইডেন ইতিমধ্যে জয় পেয়েছেন ওয়াশিংটন, অরিগন, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, নিউ মেক্সিকো, ইলিনয়, ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি, ম্যারিল্যান্ড, নিউ ইয়র্ক, ভারমন্ত, ম্যাসাচুসেটস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, কানেকটিকাট, রোড আইল্যান্ড, ডেলাওয়্যার, ডিস্টিক অব কলম্বিয়া, মেইন, মিশিগান, উইসকনসিন এবং অ্যারিজোনায়।
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন আইডাহো, ওয়েমিং, ইউটাহ, নর্থ ডাকোটা, সাউথ ডাকোটা, নেব্রাস্কা, ক্যানসাস, ওকলাহোমা, আরকানসাস, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, টেনেসি, কেন্টাকি, ইন্ডিয়ানা, আলাবামা, সাউথ ক্যারোলাইনা, মিসৌরি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, মন্টানা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, ওহাইও, আইওয়া এবং লোয়াতে।
এখনও ফল বাকি নর্থ ক্যারোলাইনা ও নেভাডার।
নর্থ ক্যারোলাইনায় ইলেকটোরাল ভোট ১৫টি। সেখানে ভোট গণনা হয়েছে ৯৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৫০ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে ট্রাম্প; বাইডেন পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। রাজ্যটিতে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ৭৬ হাজার ৭০১। এখনো গণনার বাকি ৩ লাখ ৫০ হাজার ভোট।
নেভাডার ইলেকটোরাল ভোট ৬টি। সেখানে ৮৭ শতাংশ ভোট গণনায় দেখা যাচ্ছে ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে এগিয়ে বাইডেন। ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে খুব কাছাকাছি রয়েছেন ট্রাম্প। রাজ্যটিতে এখনো ২ লাখ ভোট গণনার বাকি। দুই প্রার্থীর ব্যবধান মাত্র ২০ হাজার ১৩৭ ভোট।
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ায় ইলেকটোরাল ভোট ২০টি। সেখানে ৯৮ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যাচ্ছে, ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট নিয়ে এগিয়ে বাইডেন। ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট। সেখানে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ১৩,৬৬২। ভোট গণনার বাকি আছে ১ লাখ ৫০ হাজার। রাজ্যটিতে বুধবারও ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন প্রায় ৬ লাখ ভোটে। এখানে অবশ্য ভোটের পরে তিন দিন পর্যন্ত পোস্টাল ভোট গ্রহণ করা হয়। সে হিসাবে সেখানে গণনার বাকি থাকা ভোটের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আর তার বেশিরভাগই যেতে পারে বাইডেনের ঝুলিতে।
এদিকে ভোটের ফল নিজের বিপরীতে যাওয়ায় আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথাও বলছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের নির্বাচনী আইনজীবী বেঞ্জামিন গিনসবার্গ বলছেন, বৈধ ভোটকে অবৈধ ভোট ঘোষণা করার বিষয়টিকে শীর্ষ আদালত শুধু বিপুল ‘বঞ্চনা’ হিসেবেই দেখবে।
২০০০ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের পক্ষে পুনর্গণনার রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই সময়েও রিপাবলিকান শিবিরে ছিলেন আইনজীবী বেঞ্জামিন।
এদিকে ট্রাম্প শিবিবের ভোট গণনা বন্ধের দাবির প্রতিবাদে ডেমোক্র্যাটরাও শুরু করেছেন প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। তা নিয়ে কিছুটা সহিংসতা ছড়িয়েছে। কয়েক রাজ্যে গ্রেফতার হয়েছে অনেকে।
বাইডেন নিজের জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে সমর্থকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি বিজয়ের ঘোষণা দিতে আসিনি। আমি বলতে এসেছি, আমরা বিশ্বাস করি, গণনা যখন শেষ হবে, তখন আমরাই নিজেদের বিজয়ী হিসেবে দেখতে পাব। আর সে বিষয় হবে সকলের, আমেরিকানদের, যুক্তরাষ্ট্রের।
তিনি আরেক এক টুইটে বলেছেন, কাউকেই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না। এদিকে গতকাল শুক্রবার (৬ নভেম্বর) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
ভোট গণনার পর্ব মোটামুটি শেষ হয়ে আসতে শুরু করলেও কে হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেই আনু্ষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য দুই একদিন অপেক্ষা করতে হবে। যদি আদালত ভিন্ন কিছু সিদ্ধান্ত না দেয় তাহলে শিগগিরই দেখা যাবে মার্কিন সাম্রাজ্যের নতুন অধিপতিকে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা।